পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় : ইটা, বরমচাল প্রভৃতি স্থানের কাশ্যপ গোত্রীয় শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২০৫ সতী লক্ষ্মী কমলাকান্তের বংশে অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাহার জ্যেষ্ঠপুত্রতনয় রতিরামের জ্যেষ্ঠ পুত্র গৌরবল্লভ কামরূপ গমন করিয়াছিলেন ও বহুদিন তথায় ধৰ্ম্মসাধন করেন। তিনি দেশে আসিলে বহুব্যক্তি তাহার শিষ্যত্ব স্বীকার করিয়া ধন্য হইয়াছিল। ইহার পুত্রে নাম হরগোবিন্দ ভট্টাচাৰ্য্য। হরগোবিন্দের পুত্র রামগোবিন্দ বিদ্যাবাগীশের পত্নী লক্ষ্মীদেবী পতির মৃত্যুর পর পতিদেহ-কোলে সহমরণ শয্যায় শায়িতা হন, সেদিন দোল পূর্ণিমা তিথি ছিল। ইহাদের পুত্রের নাম গঙ্গা গোবিন্দ ন্যাপঞ্চানন, তিনি পরম পণ্ডিত ও অধ্যয়ন-নিরত ব্যক্তি ছিলেন, সদা পুস্তক লইয়া বিব্রত থাকিতেন। কমলাকান্তের মধ্যম পুত্র মহাদেব সৰ্ব্বভৌমের নাম করিয়াছি, তাহার পুত্র রাম জীবন বিদ্যালঙ্কার কৃত বিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, নবাব মোহাম্মদ জান বাহাদুর ৫ জলুসে (১৭২৪ খৃষ্টাব্দ) ইহাকে এক সনন্দে (নং ৬৭) আলীনগর হইতে ভূ-পরিমাণের খানেবাড়ী দান করেন। তাহার পুত্র রামকান্ত ভট্টাচাৰ্য্য উহা “তছরূপ" করেন, তৎপর ইহা রতিকান্তের জ্যেষ্ঠপুত্র রামচন্দ্র শিরোমণি প্রাপ্ত হন। পিতা পুত্র উভয়েই ধৰ্ম্মনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। তাহাদের উভয়ের পত্নীও স্বামীব অনুরূপা ছিলেন। সতী শাশুড়ী বধু এবংশে অনেকেই পবিত্র নারীধৰ্ম্ম রক্ষা করিয়া যশস্বিনী হইয়া গিয়াছেন । রামকান্তের মৃত্যুর পর যখন চিতাভগ্নিতে তদীয় নশ্বর দেহ ভক্ষ্মীভূত হয়, তদীয় পত্নী মনোরমা তখন “সহমরণ" গমনে পাতিব্রাত্যের প্রকৃষ্ট প্রমাণ প্রদর্শনে প্রতিবেশিবর্গের চিত্ত পবিত্র করেন। একটি জীবিতা অবলা বালা অবহেলে জ্বলন্ত অনলে আত্মপ্রাণ আহুতি দিতে দেখিলে লোকে বিস্মিত হইত, গ্রামে বহুদিন সে আন্দোলন চলিত, আর তাহার আলোচনায় লোকের চিত্ত পবিত্র হইত। সতীর পতিভক্তির ঈদৃশ জীবন্ত উদাহরণে সমাজের যাদৃশ নৈতিক উপকার হইত, বহু গ্রন্থপাঠে তাহা ঘটিবার সম্ভাবনা নাই । মনোরমা দেবীর জ্যেষ্ঠা বধূ—রামচন্দ্র শিরোমণির পত্নী গঙ্গাদেবী ও শাশুড়ীর ন্যায় যথাকালে সহমরণ গমনে সতীর পবিত্রব্রত উদ্‌যাপন করিয়া বরণীয়া হইয়াছেন । রামচন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা শ্যামানন্দের পুত্র গৌরীকান্ত আগমবাগীশ তন্ত্র শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ও পরম সাধক ছিলেন, ইনি শশান সাধন করিতেন, কিন্তু তাহাতে সিদ্ধিলাভ করিতে না পারিয়া উন্মাদবৎ শেষজীবন যাপন করেন। রামচন্দ্রের পুত্র রামকৃষ্ণ, তাহার পুত্র শ্রীকৃষ্ণ, তৎপুত্র শ্ৰীযুত কালীচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় জীবিত আছেন ॥৮ গোবিন্দবাটীর শাখাবংশ কাশ্যপ গোত্ৰীয়ের প্রথমাগমন নিধিপতি-বংশেদ্রোব বাৎস্য গোত্রীয় গোবিন্দরায় চৌধুরীর নামেই সম্ভবতঃ এস্থান "গোবিন্দবাটী" নামে খ্যাত হইয়া থাকিবে । গোবিন্দ রামের বৃহৎ বাটী এই স্থানেই ছিল। গোবিন্দরাম অপুত্রক ছিলেন এবং তাহার একমাত্র কন্যাকে তিনি ডলার কাশ্যপ গোত্রীয় শুকদেব শিরোমণির করে সমর্পণ করিয়া জামাতাকে স্বীয় সম্পত্তির অধিকারী করেন। গোবিন্দরামের ৮. এই বিবরণ ডলাবাসী শ্ৰীযুক্ত তরণী কুমার ভট্টাচার্য হইতে প্রাপ্ত।