পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড তর্কালঙ্কার, গিরিধর বাচস্পতি এবং কৃষ্ণচরণ শিরোমণি। ইহার পুত্র শ্ৰীযুত কমলাকান্ত ন্যায়ভূষণ জীবিত আছেন। লংলার গৌতম গোত্রীয়গণ কৃষ্ণপুর ও দেওগার নামোৎপত্তি মহারাজ আদি ধৰ্ম্মপার সময়ে সমাগত গৌতম গোত্রীয় কোন কোন ব্রাহ্মণ পরবর্তী কালে জিলার বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃত হইয়া পড়েন। লংলায় সৰ্ব্বপ্রথমে গৌতম গোত্রীয় যিনি আগমন হয়। কৃষ্ণপ্রসাদের প্রপৌত্র হরিপ্রসাদ এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন; তিনি অনেক ভূসম্পত্তি অৰ্জ্জন করেন। ইহার প্রপৌত্রের নাম বিষ্ণুবল্লভ ও দেববল্লভ। দেববল্লভ শিকদারি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন ও কৃষ্ণপুরের দক্ষিণ পার্শ্বে একগ্রাম বসাইয়া তথায় দীর্ঘিকা সমন্বিত একবাড়ী প্রস্তুত করেন, তাহার নামে ঐ দীঘী “দেওদীঘী" এবং গ্রামটি “দেওগাও” নামে আখ্যাত হয় । মোসলমানকে কন্যাদান দেববল্লভ একদা তীর্থ পৰ্য্যটনে গিয়াছিলেন, ঐ সময় সকি সালামত নামে এক ধনবান মোসলমান শ্রীহট্টে আসিতেছিলেন। অর্থাভাব হওয়ায় ইহার নিকট হইতে তিনি পঞ্চদশটি স্বর্ণমুদ্রা ধার করিয়া ব্যয় নিৰ্ব্বাহ করেন। পূৰ্ব্বে (পূৰ্ব্বাংশ) বলা গিয়াছে যে উক্ত সকি সালামত সকি সালামত এদেশে কিছুদিন অবস্থিতির পর একদা দেববল্লভের গৃহে আগমন করেন। কথিত আছে যে তখন তাহার কন্যা কৌতুহল বশে বেড়ায় অন্তরাল হইতে এই সন্ত্রান্ত মোসলমানকে দেখিতেছিলেন। হঠাৎ সকি সালামত যদৃচ্ছা ক্রমে সেদিকে নিষ্টীবন ত্যাগ করিলে, ছিদ্র পথে তাহার এক কণিকা উক্ত ব্রাহ্মণ তনয়ার অঙ্গে পতিত হয় । ইহাতে উহার জাতি গিয়াছে মনে করিয়া শিকদার সকি সালামতের করেই কন্যা সমর্পণ পূৰ্ব্বক কাশীধামে চিরতরে চলিয়া যান। শিকদার তনয়া সকি সালামতের দ্বিতীয়া পত্নী হন ৬ পালগা নামোৎপত্তি বিষ্ণুবল্লভ ঈশ্বর চিন্তাতেই রত থাকিতেন, তিনি একমাত্র পুত্র কৃষ্ণানন্দকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক রাখিয়াই জীবলীলা সংবরণ করেন। ঐ সময় এস্থানে সৈন্য সংরক্ষণার্থ শ্রীহট্টের নবাবের নির্দেশত মতে এক ক্ষুদ্র ঘাটি (গারদ) প্রস্তুত হইয়াছিল; সৈন্যগণের অধ্যক্ষ সাধারণতঃ “সেনাপাল” নামে কথিত হইতেন। কৃষ্ণানন্দ অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকালে উক্ত গারদের তৎকালীন ৬. সাকি সালামতের বংশ কথা ৯ম অধ্যায়ে উক্ত হইবে । ইনি লোদী বংশীয় সম্রাটগণের সময়ে ভ্রমণে বহির্গত হইয়া পরে এদেশে আগমন করেন। রাজবংশ, রাজভ্রাতৃবংশ এবং তাহার বংশে ঐক্য থাকা বিধেয় । প্রথম ও দ্বিতীয় বংশে বৰ্ত্তমানে ১২/১৩ পুরুষ চলিতেছে। রাজকৰ্ম্মচারী ইন্দানগরস্থ মণ্ডল বংশেও পুরুষ সংখ্যা তদ্রুপই । শিকদার বংশ ও সকি সালামত বংশের পুরুষ সংখ্যার সহিত তাহা সৰ্ব্বাংশে ঐক্য হয় না; ইহার কারণ কি? হয় এই বংশের পুরুষগণ দীর্ঘজীবী, নয় মধ্যে ২/১ পুরুষের নাম বাদ পড়িয়া থাকিবে । আর একটি কথা বিবেচ্য; রাজভ্ৰাতৃবংশ ও শ্রীচৈতন্য পার্ষদ বংশে ক্রমানুযায়ী পুরুষ সংখ্যার সমতা থাকা আবশ্যক । এই খণ্ডেই শিবানন্দ ও বাসুঘোষ বংশের যে বিবরণ পাওয়া যাইবে, এই গৌতম গোত্রেব বংশাবলীর সহিত তাহার বিশেষ অনৈক্য হয় নাই । ফলতঃ সমসাময়িক বংশ সমূহের পুরুষ সংখ্যার যে ইতর বিশেষ দৃষ্ট হয়, তাহাকে কোন বংশে স্বল্পজীবী, কোন বংশে বা দীর্ঘজীবী জন বাহুল্যই এই বৈষম্যের কারণ বলিয়া অনুমিত হয় ।