পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম অধ্যায় : আরও কতিপয় বংশ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২২৭ ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। শিবরামের জ্যেষ্ঠপুত্র শুভঙ্কর বিদ্যালঙ্কার, ইহার জ্যেষ্ঠপুত্রের নাম কালীশঙ্কর তর্কচূড়ামণি, ইহার চারিপুত্রের মধ্যে রুদ্রকিঙ্কর পরম সাধক ছিলেন; কথিত হইয়া থাকে যে তদীয় স্তবে তুষ্ট হইয়া ভগবতী সাক্ষাৎ দর্শন দিয়াছিলেন। তিনি বৰ্দ্ধনকুটী রাজের পণ্ডিতসভা জয় করিয়া বিশেষ প্রতিপত্তি সঞ্চয় করেন । দ্বাবিংশতি বর্ষবয়সে কাশীধামে তিনি নশ্বর জীবন ত্যাগ করেন। রুদ্রকিঙ্করের পুত্রাদি হয় নাই, তাহার ভ্রাতা রাসকিঙ্কর তর্কভূষণ মহাশয়ের পুত্র শ্রীযুক্ত হরকুমার ভট্টাচাৰ্য্য হইতে এই বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। পরগণা-চেীয়ালিশ শাণ্ডিল্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ কথা go চেয়ালিশ বাসী সামবেদীয় শাণ্ডিল্য গোত্রোৎপন্ন ব্রাহ্মণগণের এক বৃহৎ বংশ তালিকা আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি। এ বংশের বীজী পুরুষ ধরাধর মিথিলাবাসী ছিলেন। তিনি একজন প্রসিদ্ধ জ্যোতিৰ্ব্বিৎ ছিলেন, একদা তিনি স্বীয় “জাতপত্র" আলোচনায় জানিলেন যে বজ্রাঘাতে তাহার মৃত্যু হইবে। ইহা জানিয়া তিনি সংসার ত্যাগ করতঃ কাশীধামে গমন করেন ও জনৈক দণ্ডীস্বামীর নিকট প্রাণায়ামাদি যোগাঙ্গ শিক্ষা করিয়া, সাধনা প্রভাবে মৃত্যুর করাল কবল হইতে নিষ্কৃতি লাভ করেন। মৃত্যুর অবধারিত দিন অতিক্রান্ত হইলে দণ্ডস্বামী তাঁহাকে “বজ্রধর" নাম প্রদান করেন। বজ্ৰধর আর দেশে না গিয়া কালে এদেশে আগমন করেন। তাহার সহিত মৃত্যুঞ্জয় গুপ্ত নামক এক ব্যক্তি আগমন করিয়াছিলেন। ইহারা চেয়ালিশ আসিয়া বন্য ত্রিপুরা জাতীয় লোকের সাহায্যে সেই স্থান পরিষ্কার ক্রমে বাস করেন। কিছুদিন পরে তিনি আবশ্যকানুসারে এক স্থানে কিঞ্চিৎ মৃত্তিকা খনন করিতে করিতে একটা স্বর্ণ মুকুট ও অর্থাদি প্রাপ্ত হইলেন। মুকুট প্রাপ্ত হওয়ায় তিনি সেই স্থানকে “মুকুটপুর" নামে অভিহিত করিলেন । কথিত আছে, জঙ্গলাদি আবাদ করায় শ্রীহট্টের নবাব তৎপ্রতি সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে সেইস্থানে ব্ৰহ্মত্র দান করেন। বজ্রধরের পৌত্র চূড়ামণি একজন সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন, ইনি এক দীঘিকা খনন করেন: অদ্যাপি উহা "চূড়ামণির দীর্ঘী" নামে কথিত হইয়া থাকে। চূড়ামণি নিকটবৰ্ত্ত বিনশনা গ্রামে বাড়ী প্রস্তুত করিয়া বাস করেন; তাহার বংশ তথায় আছেন। এই বংশে জয়কৃষ্ণ বিদ্যালঙ্কার ও তৎপুত্র রাজকৃষ্ণ বিদ্যারত্ব খ্যাতনামা লোক ছিলেন। চূড়ামণির কনিষ্ঠভ্রাতা মধুসূদনের, বিদ্যানন্দ, বিদ্যাবল্লভ ও বিদ্যাভূষণের বংশ ফুলতৈল গ্রামে, এবং বিদ্যাবল্লভের বংশ দীপীয়া গ্রামে বাস করিতেছেন। ইহাদের বংশে বৰ্ত্তমান ৯/১০/১১ পুরুষ চলিতেছে। বিদ্যাবল্লভের দুইপৌত্র ছিলেন, তাহাদের নাম রামচন্দ্র ও রামকৃষ্ণ, রামকৃষ্ণের প্রপৌত্র শ্রীকান্ত ন্যায়ালঙ্কার একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন; কথিত আছে বিক্রমপুর ও নবদ্বীপ হইতে সমাগত বহু পণ্ডিতকে তিনি শাস্ত্রবিচারে পরাস্ত করেন। তাহার মৃত্যুর পর তদীয় পত্নী "সহমরণ" প্রথামত দেহত্যাগ করিয়া অক্ষয় পূণ্য-কীৰ্ত্তি লাভ করিয়াছেন, সেই শ্যামল ক্ষেত্র “সতীর সহগমন তলা" বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। রামচন্দ্রের অতিবৃদ্ধ প্রপৌত্র গুণেশ্বরের তিন পুত্র, ইহারা তিনজনই উপাধিধারী পণ্ডিত, তিনজনই জীবিত আছেন। বিদ্যাভূষণের বৃদ্ধ প্রপৌত্র দুইজন ছিলেন, তন্মধ্যে দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম হরবল্লভ, ইহার দুই বৃদ্ধপ্রপৌত্রও উপাধিধারী, তন্মধ্যে, রামগতি ন্যায়রত্ন মহাশয়ের মৃত্যু হইয়াছে ৬ ৬. মোনসী বাজার হইতে শ্ৰীযুক্ত রাধাচরণ ভট্টাচাৰ্য্য এই বিবরণ প্রেরণ করিয়া আমাদের সাহায্য করিয়াছেন।