পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড ইহার পুরস্কারস্বরূপ তাহাকে বিনা পাশে বন্দুক রাখিবার অধিকার দিয়া সম্মানিত করেন। অনেকেই তাহার নিকট হইতে টাকা ধার লইত; জনৈক ভদ্রঘরের অধমণকে তিনি এক সময় ১১০০০ একাদশ সহস্র মুদ্রা মাপ দিয়াছিলেন; ইহা সামান্য উদারতাজ্ঞাপক নহে। তদ্ব্যতীত তীর্থাদিতে তদীয় দানের সংখ্যাও অল্প ছিল না। বৃন্দাবনের কুঞ্জে সাধুসেবার জন্য তিনি এককালীন পঞ্চদশ সহস্র মুদ্রা দান করিয়া গিয়াছেন। একজন তৈর্থিক মোহান্তের ঋণশোধের জন্য তৎক্ষণাৎ এক সহস্র টাকা প্রদান করিয়াছিলেন। তাহার ভ্রাতা সূৰ্য্যমণি রায় প্রকৃত সাধু পুরুষ ছিলেন। তিনি বিপদে সম্পদে সমভাবে অবস্থিতি করিতেন। মুখে সৰ্ব্বদাই হরিনাম বিরাজ করিত, ভোগসুখে বিরত ছিলেন, এমন কি দুঃসহ আত্মীয় বিয়োগেও তাহাকে অধৈৰ্য্য হইতে দেখা যাইত না; ইহার ন্যায় সংসার-যোগী পুরুষ ইদানীং দৃষ্ট হয় না। “বাণিজ্যে লক্ষ্মীর বাস”-বাণিজ্যেই ইহাদের অতুল ঐশ্বৰ্য্য-সম্পদ-সং প্রাপ্তি; যখন বাদবিসম্বাদে জলসুখার পূৰ্ব্বাধিকারিগণ ঋণগ্রস্ত হইয়া পড়িয়ছিলেন, বাণিজ্যলব্ধ অর্থে রায় বংশীয়গণ তখন তাহদের ভূ-সম্পত্তি ক্রয় করিতে থাকেন; তদ্ব্যতীত বাণিয়াচঙ্গের অনেক মহাল তাহাদের হস্তগত হয়। এইরূপে রায় বংশীয়গণ তদঞ্চলে মহাশক্তিসম্পন্ন হইয়া উঠিয়াছিলেন । কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, ইদানীং ইহারা অর্থকর বাণিজ্য পরিত্যাগ করায়, অবস্থা কিছুটা স্নান হইয়া পড়িতেছে। তাহাদের মধ্যে শিক্ষিত সংখ্যার অভাব নাই, সুতরাং তাহারা নিজ ক্রটি সংশোধন করিয়া লইবেন বলিয়া আশা করা যায় ॥৪ পুনঃ পরগণা-তরফ মাছুলিয়ার চৌধুরী বং তরফে মাছুলিয়াতে সাহা-বণিক বংশীয় চৌধুরীদের বাস। এই বংশের পূৰ্ব্ব পুরুষ নিত্যানন্দ ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তাহার পুত্র বদি (বৈদ্যনাথ), তৎপুত্র উদ্ধব, উদ্ধবের রাম ও লক্ষ্মণ নামে দুই পুত্র জন্মে; ইহারাই তত্ৰত্য চৌধুরাই প্রাপ্ত হন। ইহাদের নামীয় একটি তালুক তথায় আছে । এই বংশের সৎকীৰ্ত্তি অল্প নহে, লক্ষণ রায় ১১৯৩ সালে পঞ্চরত্ন সমন্বিত এক দোতালা বাড়ী প্রস্তুত করেন, ঐ বাড়ীতে শ্রীকৃষ্ণের ঝুলনোৎসব হইত। ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে এই বংশীয় চৌধুরীগণ কর্তৃকই মাছুলিয়া বঙ্গবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। লক্ষ্মণ রায়ের, লাল চান্দ, কৃষ্ণরাম ও বিষ্ণুরাম নামে তিন পুত্র হয়। এই তিন ব্যক্তি হইতে মাছুলিয়ার চৌধুরী বংশে তিন পরিবারের উৎপত্তি হইয়াছে। ইহাদের পুত্র পৌত্ৰাদি মধ্যে প্রায় সকলেই স্বধৰ্ম্মনিষ্ট ছিলেন, বাহুল্য বিধায় তদুল্লেখ করা গেল না। লালচান্দের দুই পুত্র; তন্মধ্যে কণিষ্ঠের নাম রতুবল্লভ, ইহার পুত্র “নীতিশতক,” “কলঙ্কভঞ্জন," "বৈষ্ণব পদাবলী” ও “ঘাটু সঙ্গীত" প্রভৃতি প্রণেতা শ্রীযুক্ত রামবল্লভ রায় জীবিত আছেন। বিষ্ণুরামের পুত্র বৈদ্যনাথ, তৎপুত্র বৈকুণ্ঠনাথ একজন প্রতাপান্বিত জমিদার ছিলেন; তিনি অনারের ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত হইয়াছিলেন। তিনি সহজধর্মের প্রতি পোষককে শ্ৰীবিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকায় তিনি কয়েক প্রবন্ধ লিখিয়াছিলেন। ৪. প্রেরক শ্রীযুক্ত পদ্মলোচন দেব ও শ্রীযুক্ত বিজানাথ তর্কপঞ্চানন।