পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৩ অন্যতম এবং তিনিই প্রধান ছিলেন। শ্ৰীমহাপ্ৰভু ও অদ্বৈতের সম্মিলিত বহু বিস্তৃত লীলাকথা বর্ণনের একান্ত স্থানাভাব। জ্ঞান ব্যাখ্যা অদ্বৈতের জ্ঞানব্যাখ্যা একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা। শ্ৰীমহাপ্রভু বৃদ্ধ-তপস্বী অদ্বৈতাচাৰ্য্যকে গুরুবৎ ভক্তি করিতেন, সময় সময় পদধূলি গ্রহণ করিতেও কুষ্ঠিত হইতেন না; ইহাতে অদ্বৈত মরমে মরিয়া যাইতেন। অদ্বৈতাদি ভক্তবর্গ শ্ৰীমহাপ্রভুর ভগবত্ত্বা সত্য কি না, তদ্বিষয়ে কঠোর পরীক্ষা করিয়াছিলেন। যাহার অতিরিক্ত পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, তদ্রুপ পরীক্ষা করিয়া তাহাদের দৃঢ় বিশ্বাস জনিয়াছিল যে, শ্রীগৌরাঙ্গ মনুষ্য নহেন। সুতরাং বয়সে বালক হইলেও কিন্তু লৌকিক ব্যবহারে পারিতেন না। এদিকে শ্ৰীগৌরাঙ্গ বিপরীত ব্যবহার করিয়া বসিতেন। ইহাতে অদ্বৈতের অন্তর ব্যথিত না হইবার কথা কি? এইরূপ ব্যবহার পরে অদ্বৈতের অসহ্য হইয়া উঠিল—ভগবানের উপর ভক্তের অভিমান হইল । অভিমানের উত্তেজনায় তিনি মনে করিলেন– “দেখিব কেমন ভগবান! তিনি যে ভক্তিবাদের পক্ষপাতী, জ্ঞানব্যাখ্যা করিয়া ভক্তির প্রাধান্য উড়াইয়া দিব, আমি তাহাতে দোষ দিব, ইহাতে তিনি শাস্তি করেন কি না দেখিব ২২ আমি দণ্ড্য হইতেই চাহি; দণ্ড ব্যক্তি পূজাৰ্হ নহে; সুতরাং দণ্ড প্রাপ্তিই আমার অভীষ্ট সিদ্ধির উপায়।” অভিমান—বিলিপ্ত চিত্তের সঙ্কল্প বিশুদ্ধ ও সুবিচার-সহ না হইলেও অনেকস্থলে বড়ই মধুর। অদ্বৈত অভিমান করিয়া অনতিবিলম্বে শান্তিপুরে চলিয়া গেলেন ও জ্ঞানের প্রাধান্য প্রকীৰ্ত্তনে প্রবৃত হইলেন। অদ্বৈতের কয়েকজন শিষ্য সেই ব্যাখ্যা শ্রবণে বিমোহিত হইল। কেহ কেহ বা মনে ভাবিল যে, যিনি পূৰ্ব্বে ভক্তির মহিমা কীৰ্ত্তন করিতেন, তিনিই এখন জ্ঞানের প্রাধান্য প্রচার করিতেছেন,—এতদুভয়ের মধ্যে কোনটা সত্য? তাহার কোন কথা গ্রহীতব্য? তাহারা বড়ই সংশয়ান্বিত হইয়া রহিল। শ্ৰীমহাপ্ৰভু অদ্বৈতের এই কাণ্ড শুনিলেন, ইহার ভিতরে যে এক গৃঢ় অভিসন্ধি রহিয়াছে, তাহা বুঝিলেন এবং নিত্যানন্দ সহ শান্তিপুরে চলিলেন। অৰ্দ্ধ পথে যাইতে না যাইতেই তিনি বাহ্যজ্ঞান-বিরহিত হইলেন, তাহার “আবেশ” উপস্থিত হইল; তদবস্থায় তিনি অদ্বৈত-গৃহে উপস্থিত হইয়া শিষ্য-বেষ্টিত জ্ঞানব্যাখ্যা-নিরত বৃদ্ধকে দেখিতে পাইয়া কঠোর ভাবে শাস্তি প্রদান করিলেন । শিষ্যগণ এই ব্যাপার দৃষ্টে বিক্ষিত হইয়া রহিল, অদ্বৈতের পুত্র ও পত্নী প্রভৃতি ব্যাকুলিত ভাবে কিংকৰ্ত্তব্য-বিমূঢ় হইয়া রহিলেন। কিন্তু অদ্বৈতের ভাব বিপরীত, শাস্তি পাইয়া তিনি আনন্দিত, এত আনন্দিত যে, তিনি নৃত্য করিতে লাগিলেন। উন্মত্তের ন্যায় নৃত্য করেন, আর শ্ৰীগৌরাঙ্গের পদধুলি লইয়া অঙ্গে মাখেন। শ্রীগৌরাঙ্গ বাহ্যজ্ঞান-বিরহিত, কাজেই তিনি “না” বলিতেছেন না। বিশেষতঃ এই মাত্র যাহাকে প্রহার করিয়াছেন, সে পদধুলি লইতে কি বলিয়া বারণ করিবেন? ২২. “এবে জ্ঞানবাদ আমি করিব প্রচার। যাহাতে প্রভুর হয় ক্রোধের সঞ্চার। শুনিয়া অবশ্য প্রভু আসি শান্তিপুর। নিজ হাতেতে শাস্তি করিবে আমারে॥"-প্রেম বিলাস ।