পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৫ শান্তিপুরে কয়েক দিন ভক্তের আনন্দ বিধান করিয়া শ্ৰীগৌরাঙ্গ অবশেষে নীলাচলে গমন করেন। অন্যান্য ভক্তবর্গসহ অদ্বৈত প্রতিবর্ষে নীলাচলে গিয়া তাহার সহিত সম্মিলিত হইতেন ও রথোৎসবের পরে চলিয়া আসিতেন। একবার অদ্বৈত শ্ৰীমহাপ্রভুকে বড়ই উত্যক্ত করিয়াছিলেন। শ্ৰীমহাপ্রভু সহজ অবস্থায় কখনও এরূপ ভাব প্রকাশ করেন নাই যে, তিনি অবতার। অবতার বলিয়া দৈবাৎ কেহ বলিয়া ফেলিলে তিনি বড়ই বিরক্ত হইতেন, তাই ভক্তগণ ভয়ে একথা মুখে আনিতেন না। নীলাচলে একদিন অদ্বৈত তাহাই করিয়া বসিলেন। শ্রীচৈতন্য বিষয়ক সঙ্গীত করিতে তিনি ভক্তবর্গকে অনুরোধ করিলেন, ভক্তবর্গ এই কঠিন অনুরোধ রক্ষা করিতে ভীত হইলেও বৃদ্ধ ঋষিকল্প অদ্বৈতের বাক্য তাহারা লঙ্ঘন করিতে না পারিয়া প্রস্তুত হইলেন; বিশেষতঃ অদ্বৈতের এই কথাটি সকলেরই মনের কথা ছিল। অদ্বৈত স্বয়ংই হর্ষে সঙ্গীত রচনা করিয়া দিলেন। তাহাই শ্ৰীগৌরাঙ্গ বিষয়ক আদি সঙ্গীত, অতএব শ্ৰীগৌরাঙ্গ বিষয়ক সঙ্গীতের আদি রচয়িতাও শ্রীহট্টবাসী। শ্ৰীগৌরাঙ্গ বিষয়ক সে সঙ্গীতটি এস্থলে উদ্ধৃত করা হইল— ১। “শ্রীচৈতন্য নারায়ণ করুণা সাগর। দীন দুঃখিতের বন্ধু, মোরে দয়া কর।” শ্রীচৈতন্য ভাগবতে লিখিত:—“অদ্বৈত সিংহের শ্রীমুখের এই গীত ।” ૨ । শ্রীরাগ— “পুলকে রচিত গায়, সুখে গড়াগড়ি যায় দেখরে চৈতন্য অবতারা । বৈকুণ্ঠ নায়ক হরি, দ্বীজরীপে অবতরি, সঙ্কীৰ্ত্তনে করেন বিহারা॥ কনক জিনিয়া কান্তি, শ্রীবিগ্রহ শোহে রে, আজানু লম্বিত মালা সাজে রে । সন্ন্যাসীর রূপে আপন রসে বিহবল, না জানি কেমন সুখে নাচে রে॥ জয় জয় গৌর বৃন্দাবন রায়া রে । জয় জয় সম্প্রতি, নবদ্বীপ পুরন্দর, চরণ কমল দেহ ছায়া রে॥” সঙ্কীৰ্ত্তন ধ্বনি শ্রবণে শ্ৰীমহাপ্রভু কীৰ্ত্তন স্থলে আসিয়াছিলেন, তিনি ভক্ত বর্গের এই অভিনব কাণ্ড দর্শনে তখনই সেস্থান ত্যাগ করিয়া চলিয়া যান। বাসায় গিয়া তিনি শয়ন করিয়া রহিলেন, কাহাকেও কিছু বলিলেন না। কীৰ্ত্তনান্তে যথাকালে ভক্তগণ তৎসহ সাক্ষাৎ করিতে গেলেন; মধুর প্রণয়কোপ চিহ্ন তাহার বদনে উদ্ভাসিত হইল, তিনি শয্যায় থাকিয়াই জিজ্ঞাসিলেন—“আজ আপনারা কি গাইলেন? আমি তো বুঝিতে পারি নাই। কৃষ্ণের স্থানে আবার কে অবতার হইয়া দাড়াইল।" ভক্তগণ নিরুত্তর—কি বললেনঃ বৃদ্ধপণ্ডিত শ্ৰীবাস তখন সূর্যের দিকে করপত্র আচ্ছাদন দিয়া দাড়াইয়া রহিলেন। শ্ৰীমহাপ্রভু আবার বলিলেন—“কীৰ্ত্তন তো বুঝি নাই, পণ্ডিতের এই অভিনয়ের মৰ্ম্মও যে বুঝিতে পারিতেছি না! শ্ৰীবাস তখন উত্তর করিলেন—“হাতে সূৰ্য্যকে আচ্ছাদন করা যায় কিনা দেখিতেছি!”—“কারণ?”—শ্ৰীবাস বলিলেন “কারণ এই যে; যাহা হইতে ত্রিভুবন প্রকাশ