পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ মিশন স্কুলের শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হইলেন। গোবিন্দ চরণ গোড়া হিন্দু ছিলেন, কিন্তু প্রবল জ্ঞান-স্পৃহা বশতঃ স্কুলে কাৰ্য্য কালীন তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করিয়াছিলেন । আট বৎসর পরে মিশনারি সাহেবের সহিত কোন বিষয়ে মতান্তর হওয়ায় তিনি কৰ্ম্ম ত্যাগ করেন; গোবিন্দ চরণ নিজ ছাত্রদেরকে বড়ই ভালবাসিতেন, সহাস্যবধন শিক্ষক হাস্য কৌতুকের সহিত ছাত্রদিগকে শিক্ষা দান করিতেন; ছাত্রগণ তাহাকে ভাল না বাসিয়া থাকতে পারতেন না। তিনি স্কুল ত্যাগ মাত্র প্রায় সকল ছাত্রই তাহার সঙ্গে চলিয়া আসেন; ইহাই বলিতে গেলে মিশন স্কুলের মৃত্যুর কারণ; গোবিন্দ চরণ সেই ছাত্রদেরকে তখন স্বয়ং শিক্ষা দিতে আরম্ভ করিলেন। ইহার পরেই ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে শ্রীহট্ট গবর্ণমেন্ট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম কিছুদিন যিনি (উমাচরণ বাবু) প্রধান শিক্ষক ছিলেন, তিনি চলিয়া গেলে স্কুল কমিটির মেম্বর দের সকলেই ইচ্ছা হয় যে, গোবিন্দ চরণকে প্রধান শিক্ষকের পদ দেওয়া হয় যে । এই সময় শ্রীযুক্ত দুর্গা দেশবাসী ছাত্রবর্গের মঙ্গল হইবে বুঝিতে পারিয়া তিনি ইহার জন্য স্বয়ং কমিটিকে অনুরোধ করেন। তাহার অনুরোধ রক্ষা হইলে তিনি সানন্দে দ্বিতীয় শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন। গোবিন্দ চরণকে অতঃপর কাছাড় জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ প্রদান করা হয়, কিন্তু জন্মভূমির মায়ায় আকৃষ্ট হইয়া ও নিজ পুত্র কন্যার শিক্ষার সুবিধার জন্য শীঘ্রই তিনি সে দেশ ত্যাগ করিয়া পূৰ্ব্ব পদে উপস্থিত হন। তৎপর তিনি কিছুদিন শ্রীহট্ট নৰ্ম্মাল স্কুলের প্রধান শিক্ষকরূপে কাৰ্য্য করেন। ইহার পরে জোড়হাট, ধুবড়ী ও গৌহাটিতে হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ গ্রহণ করিতে গবৰ্ণমেন্ট কর্তৃক অনুরুদ্ধ হন, কিন্তু পূৰ্ব্বোক্ত কারণে এই পদোন্নতি গ্রাহ্য করেন নাই। শ্রীহট্টে থাকিয়া স্বয়ং স্বদেশীয় ছাত্রবর্গকে শিক্ষাদানের অপরিসীম আনন্দ অপেক্ষা তিনি আর্থিক লভ্য অকিঞ্চিৎকর বোধ করিতেন। সঙ্গীত বিদ্যায় তাহার বড়ই অনুরাগ ছিল, তিনি সুকণ্ঠ ছিলেন না, সাধনায় কণ্ঠস্বর সুন্দর হইতে পারে বলিয়া তিনি তৎসাধনায় কঠোর প্রয়াস করিতেন। অভ্যাসকালে শীতের সময় গলা জলে নামিয়া তাহাকে সঙ্গীত সাধনা করিতে দেখা গিয়াছে। এইরূপে তিনি একজন বিখ্যাত “কালাওয়াত” বলিয়া গণ্য হইয়াছিলেন। তাহার শরীরে সামর্থ্যও ছিল, তিনি তৎকালের রীতি অনুসারে "কুস্তি বা দেশী" কসরত করিতেন। মৃত্যুর মাত্র তের দিন পূৰ্ব্বে তিনি কলিকাতায় তাহার চিকিৎসকদিগকে দেশী কসরত দেখাইয়া বিস্মিত করেন। তিনি প্রায় এক মাস কাল যকৃৎ ও তদানুষঙ্গিক পাণ্ডু রোগে ভুগিয়া বিগত ১৯০৬ ইং ফেব্রুয়ারী মাসে ৭০ বৎসর বয়সে মানব লীলা সংবরণ করেন। তাহার মৃত্যু সংবাদ ইংলিশমেন, বেঙ্গলী, ইণ্ডিয়ান ডেলি নিউজ, ষ্টেটমেন প্রভৃতি ইংরেজী ও দৈনিক প্রভৃতি বাঙ্গাল কাগজে ঘোষিত হইয়াছিল ৪৩ গৌরহরি চক্রবর্তী অৰ্দ্ধ শতাব্দী পূৰ্ব্বেও শ্রীহট্টের বাহিরে বহু স্থানে শ্রীহট্টবাসী প্রসিদ্ধিলাভ করিয়া জন্মস্থানের মুখ উজ্জ্বল করিয়া গিয়াছেন,—তাহাদের মধ্যে বারাণশী ধামে অনেকে অবস্থান করিতেন। স্বগীয় ৪৩. তাহার প্রথম পুত্র শ্রীযুক্ত গিরিশ চন্দ্র দাস শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হইতে সগৌরমে বি, ই পরীক্ষায় সৰ্ব্বপ্রথম হইয়াছিলেন ।