পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৫৫ টাকা জরিমানার এবং ১০০০ টাকার দুই জন জামিন দেওয়ার আদেশ হয়। ১৮৪৭ খৃষ্টাব্দে হইতে সম্বাদ ভাস্কর সপ্তাহে দুইবার করিয়া বাহির হইতে আরম্ভ হয়, পরে ১৮৫০ খৃষ্টাব্দ হইতে সপ্তাহে তিনবার করিয়া প্রকাশিত হইতে থাকে এবং মূল্য ১২ টাকা স্থানে ৮ টাকা নিরূপিত হয়। এই সময়ে তিনি রসরাজ বন্ধ করিয়া দেন। গৌরী শঙ্কর গ্রস্থ প্রণয়নেও বিরত ছিলেন না। ১৮৩৭ খৃষ্টাব্দে রাজা রাধাকান্ত দেব বাহাদুর “নীতি-কথা” নামক এক খানা শিশু পাঠ্য পুস্তক প্রকাশ করিয়াছিলেন, গৌরী শঙ্করই নীতি কথার রচয়িতা ছিলেন। গৌরী শঙ্করের নীতি কথার তিনটি ভাগ প্রকাশিত হইয়াছিল এবং ইহার বহু সংস্করণ বাহির হইয়াছিল। এতদ্ব্যতীত তিনি “ভূগোল” “জ্ঞান প্রদীপ” ১ম ও ২য় ভাগ এক মার্কণ্ডেয় পুরাণোক্ত দেবী মহাত্মা চণ্ডীর একখানা উৎকৃষ্ট সংস্কৃত টীকা প্রণয়ন করিয়াছিলেন। কাশীদাসের মহাভারত যখন প্রথম মুদ্রিত হইয়া প্রচারিত হয়, তখন শ্রীরামপুরের কেরী সাহেবের পণ্ডিত, যশোহর বাসী জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ইহার অনেক স্থল পরিবর্তন করিয়া ভাষা শুদ্ধি বিধানের যত্ন করেন, জয়গোপালের পরে গৌরী শঙ্কর তর্কবাগীশও এই প্রয়াস পাইয়াছিলেন, তাহার সংশোধিত মহাভারতের বন পর্বের সমাপ্তিতে লিখিত আছেঃ– “শ্রীগৌরী শস্কক বলে ভারতের শাখা । বণপৰ্ব্ব অপূৰ্ব্ব সমাপ্ত রস মাথা৷ শোধন করিতে যত পাইলাম ক্লেশ । সাধুগণ পঠনে হইবে দুঃখ শেষ।” (বঙ্গবাসী প্রকাশিত মহাভারতের ভূমিকা হইতে) ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে তর্কবাগীশ গুরুতর পীড়িত হইয়া পড়েন, কিন্তু সে যাত্রা রক্ষা পাইয়াছিলেন, ইহার পরবর্ষে (১২৬৫ বাং ২৫ শে মাঘ) ৫৮ বৎসর বয়সে তিনি মৃত্যু মুখে পতিত হন।৪৯ গৌড় গোবিন্দ (রাজা) শ্রীহট্টের গৌড় রাজ্য এককালে এ প্রদেশে এক শক্তি সম্পন্ন খণ্ডরাজ্য ছিল, গোবিন্দ ইহার অধিপতি ছিলেন, খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে ইনি শ্রীহট্টে শাসন দণ্ড পরিচালন করেন, ইহার বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে বর্ণিত হইয়াছে। চন্দন শৰ্ম্মা বাণিয়াচঙ্গ পরগণার অন্তর্গত দড়য়া মৌজায় চূড়ামণি ভট্টাচাৰ্য নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন, তিনি দাস জাতির যাজনা করিতে আরম্ভ করেন, চূড়ামণির রাম, চন্দন, বলাই ও জগন্নাথ নামে চারি পুত্র হয়, তন্মধ্যে চন্দন, গুরুর উপদেশ অনুসারে কামাখ্যা পীঠে মন্ত্র সাধনে সিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। তিনি কামরূপ হইতে দেশে আসিলে নানা ব্যক্তি তাহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইত। চন্দন শৰ্ম্মার গুণ শ্রবণে দাউদ নগরের প্রসিদ্ধ সাধক পীরবাদশাং০ তাহাকে গ্রহণ করিতে অনুরোধ করেন। চন্দন পীরবাদশার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিলেন ও “খানা” গ্রহণে স্বীকৃত হইলেন। পীর বাদশার কথামত তখন মোসলমানের ভক্ষ্য খাদ্য দ্রব্য আনীত হইল। চন্দন সেই পাত্রের আবরণ উন্মোচন করিলে দেখা গেল যে, পাত্রে পুষ্প, ঘৃত, তণ্ডুল ও চিনি রহিয়াছে, আনীত ৪৯. এই প্রবন্ধ সঙ্কলনে দেশবাৰ্ত্তা ও বিজয়া পত্রিকার প্রকাশিত দুইটি প্রবন্ধের সাহায্য পাইয়াছি। ৫০. ইহার কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাঃ ২য় খঃ ৫ম অধ্যায়ে কথিত হইয়াছে।