পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৯৩ যান। কামাখ্যায় অবস্থানকালে তদীয় সাধন-সহচারী-ভৈরবীর পরলোক প্রাপ্তি ঘটে। সেই স্থলে তিনিও সন্ন্যাসধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া পরমহংস স্বামী ব্ৰহ্মানন্দপুরী এই সংজ্ঞা ধারণ করেন। অতঃপর প্রবাদ এইরূপ যে, শ্রীহট্টস্থ বাণিয়াচঙ্গ নগরে যে কালীবাড়ী আছে,১০০ তাহাতে গিয়া জীবনের অবশিষ্টকাল যাপন করিতে তিনি প্রত্যাদেশ লাভ করেন।” “গোহাটীতে তখন কাত্যায়ন বংশীয় স্বগীয় কৈলাস চন্দ্র বিশ্বাস-প্রমুখ বাণিয়াচঙ্গ-নিবাসী অবস্থা অবগত হইয়া এবং পূৰ্ব্বোল্লিখিত প্রত্যাদেশের বংশবত্তী হইয়া ব্ৰহ্মানন্দ আনুমানিক ১২৭০ সালে বাণিয়াচঙ্গে আগমন করেন, এবং মানবলীলার অবশিষ্ট সময় এই স্থানেই অবস্থিত করেন। কিন্তু বাণিয়াচঙ্গ নিয়ত বসতির স্থান হইলেও তিনি মধ্যে মধ্যে শ্রীহট্ট শহরে বিশেষতঃ তৎসন্নিকৃষ্ট গোটাটিকর অঞ্চলে পদার্পণ করিয়া তদীয় পূৰ্ব্বপরিচিত অনুরুক্ত ব্রাহ্মণ ভদ্রদিগকে চরিতার্থ করিতেন ।" “বাণিয়াচঙ্গ ব্রাহ্মণপণ্ডিত বহুল স্থান; এই স্থানে আসিয়া পরমহংস ব্রহ্মানন্দ স্বীয় অগাধ ব্রতার সবিশেষ পরিচয় দিবার অবসর পাইলেন । সৰ্ব্বদা প্রাহ্নে অপরাহ্নে মহাত্মা চতুৰ্দ্দিক ঘেরিয়া পণ্ডিত ও তত্ত্বজিজ্ঞাসু জনগণের ভিড় লাগিয়াই থাকিত । “পরমহংস ব্রহ্মানন্দ তান্ত্রিক সন্ন্যাসী হইলেও, অর্থাৎ জ্ঞানমার্গ প্রধানতঃ তাহার অবলম্বনীয় হইলেও তাহাতে ভক্তিভাবের স্ফুরণ প্রায়শঃ পরিলক্ষিত হইত। অথচ তাহার চক্ষু হইতে অনবরত দরদরিত ধারায় প্রেমাশ্র বর্ষিত হইত। অথচ তাহাকে সৰ্ব্বদাই একজন আনন্দময় পুরুষ বলিয়া বোধ হইত। তিনি যেন সতত সচ্চিদানন্দ-সাগরে নিমগ্ন থাকিতেন; অথচ শাস্ত্রকথা পড়িলে তিনি পঞ্চানন্দ-কল্প হইয়া অনর্গল সংস্কৃতময়ী বক্তৃতায় তাহা বুঝাইয়া দিতেন, তিনি যে কোনশাস্ত্র জানিতেন, কোন শাস্ত্র জানিতেন না, তাহার কেহই ইয়ত্তা করিতে পারিত না। যে কোনও শাস্ত্রের কথা তাহার নিকট উপস্থিত হইলে তৎক্ষণাৎ তাহার মীমাংসা করিয়া দিতেন। আবার, শাস্ত্রকথা বলিতে বলিতে যখন মধ্যে মধ্যে সহসা অট্টহাস্য করিয়া আমনি গভীর ভাবরাশিতে নিমগ্ন হইয়া নিস্তব্ধ ভাব ধারণ ও নয়নজল বর্ষণ করিতেন, তখন সকলে অবাক হইয়া তাহার দিকে চাহিয়া থাকিত। কখন কখন বা সংস্কৃত তোটক বা পজম টিকা ছন্দে স্বরচিত সঙ্গীত সুমধুর কণ্ঠে গান করিয়া সকলের মনোহরণ করিতেন। তাহার নিদ্রা একপ্রকার ছিল না বলিলেও হয়, পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি পাণদ্বারা তিনি কুলকুণ্ডলিনী জগৎ রাখিতেন।” “এব-প্রকার মহাপুরুষের কথা চতুর্দিকে রাষ্ট্র হইবে, ইহা বলাই বাহুল্য। পূৰ্ব্বাঞ্চলের বড় বড় বংশীয় তান্ত্রিক ব্রাহ্মণবর্গের অনেকে তাহার নিকট হইতে দীক্ষা গ্রহণ করিয়া কৃতাৰ্থ হইলেন। ক্রমশঃ তাহার কতা সুদূর মণিপুর রাজ্য পর্যন্ত পৌছিল।" “তখন মহারাজ কীৰ্ত্তিচন্দ্র মণিপুর রাজ্যের অধিশ্বর ছিলেন, xx কীৰ্ত্তিচন্দ্র কোনও ধৰ্ম্মতত্ত্ব মীমাংসার নিমিত্ত ব্যাকুল হইয়া যখন কান্দিগ্ৰভূত হইয়াছিলেন, তখন স্বপ্নে পরমহংস ব্ৰহ্মানন্দ স্বামীর শরণাপন্ন হইতে আদিষ্ট হন। ব্ৰহ্মানন্দ পুরীকে স্বীয়রাজ্যে আনিবার নিমিত্ত মহারাজ নিৰ্ব্বন্ধ সহকারে শ্রীহট্টের ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের নিকট চিঠি লিখিয়াছিলেন। ব্ৰহ্মানন্দ জানাইলেন, তিনি তন্ত্রাচারী, “কারণ” না হইলে তাহার চলে না। বৈষ্ণব মহারাজ যদি তাহার ব্যবস্থা না করেন, তবে তিনি মণিপুর যাইতে পারবেন না; তখন পিপায় পিপায় “কারণ” সংগৃহীত হইল, ব্ৰহ্মানন্দ কতিপয় অনুচর সহ মণিপুর গিয়া কিয়দিবস সেই স্থলে অবস্থান করিয়া মহারাজের ১০০. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাঃ ৩য় খঃ ২য় অধ্যায়ের প্রথমেই এই কালীর বিবরণ আমরা প্রদান করিয়াছি।