পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ তাহার মাসী প্রত্যহ অগ্নিসেবন করিতেন, কাজেই তাহার কাঠের খুব প্রয়োজন ছিল। মাসী তাহাকে কাঠের অভাব জানাইলে, একদা রাত্রিতে ৬/৭ হাত বেষ্টনি বিশিষ্ট একটা গাছ কোন অদৃশ্য শক্তি সাহায্যে আনাইয়া রাখিয়া দিয়াছিলেন। এই ঘটনার পর আর তিনি আত্ম-গোপন করিতে সমর্থ হন নাই । শ্রীহট্ট শহরের এক সন্ত্রান্ত পরিবারের একটি বালিকা বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেও বস্ত্র পরিধান করিতেন না; বলপ্রয়োগেও কিছু হয় নাই;১০৩ বস্ত্র পরিধান করিলে তাহার প্রাণ যেন আকুলই হইয়া উঠিত, ছটফট করিত। তিনি অষ্টাদশ বৎসর বয়স পর্য্যন্ত একেবারে উলঙ্গিনী রহিয়াছিলেন। তাহার বাসের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা করা হইয়াছিল, একটা সুন্দর গৃহে তাহাকে একাকিনী থাকিতে দেওয়া হয়; সেই গৃহে তাহার জনৈকা সখী ও দাসী ব্যতীত কেহই যাইতে পারিত না, সে গৃহ সৰ্ব্বদা চাবিবন্ধ থাকিত। গৃহস্বামী জমিদার মহাশয় কোনক্রমে ভৌলার গুণের কথা শুনিয়া তৎকর্তৃক কোন দৈবপ্রতিকার দ্বারা কন্যার এই বস্ত্রবিদ্বেষরোগ আরোগ্য হয় কি না, দেখিতে ইহাকে পরম সমাদরে বাড়ীতে নেন। কিন্তু ভৌলাকে কিছুই করিতে হয় নাই, তাহার উপস্থিতি মাত্র আবদ্ধ গৃহের ভিতর হইতে স্ত্রীলোকটি পরিধেয় বস্ত্রের জন্য প্রার্থনা করিতে থাকেন, তৎক্ষণাৎ তাহাকে বস্ত্র দেওয়া হয় এবং তিনি স্বয়ং তাহা পরিধান করেন। তদবধি উহার বস্ত্র-বিদ্বেষ বিদূরীতা হয়, এবং তৎপর তাহার বিবাহ হয়। শাহ ভৌলার শিষ্য পিয়ারশাহ, তাহার শিষ্য নাইওর শাহ, তৎশিষ্য লাল শাহ, ইহার পুত্ৰগণ বৰ্ত্তমান আছেন। মথুরানাথ ভট্টাচাৰ্য্য হবিগঞ্জ সবডিভিসনের অন্তর্গত বাজুকা গ্রামে মথুরানাথের জন্ম, ইহার পিতামহ বিবাহ সূত্রে একটি বিষয়ের অধিকারী হইয়া বাণিয়াচঙ্গের জাতুকৰ্ণ পল্লী হইতে রাজুকায় গিয়া বাস করেন। মথুরানাথ শৈশবে অভিভাবক বিহীন হইয়া পড়িয়াছিলেন; ইহার বুদ্ধি অতি প্রখর ছিল, মাত্র এক বৎসর কাল ব্যাকরণ অধ্যয়ন করিয়া তাহাতে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। এতদ্ভিন্ন কি স্মৃতি, কি সাহিত্য, কি জ্যোতিষ, যে কোন বিষয়ের আলোচনা করিতেন; অতি অল্পকালেই তাহাতে তাহার বিশেষ অধিকার জনিত, এইজন্য তাহার স্বজ্ঞাতি -খুল্লতাত প্রসিদ্ধ শিবচন্দ্র ন্যায়পঞ্চানন তাহাকে পুত্ৰাধিক স্নেহ করিতেন। কিন্তু সাংসারিক অবস্থার পীড়নে তাহাকে শীঘ্রই পড়াশুনা ছাড়িয়া সংসারের ভার গ্রহণ করিতে হয়। তাহার উপর পৈতৃক শক্রদের উৎপীড়নের মাত্রাও প্রথমতঃ অল্প হয় নাই; কিন্তু ইহাতে সাংসারিক কাৰ্য্যে তাহার এতাদৃশ পরিপক্কতা জন্মে যে, তদীয় কাৰ্যকুশলতা দৃষ্টে চতুর ব্যবহারজীবীও চমৎকৃত হইতেন। সংকীৰ্ত্তন বা কবির দলে গীত হইবার নিমিত্ত গনের প্রয়োজন হইলে, ঈষদায়াসেই ইনি তাহা সুষ্ঠ রচনা করিয়া ধনাগমের উপায় উদ্ভাবনেই রত থাকিতেন। তিনি গ্রামে যৌথ । লোন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করেন ও প্রায় পঞ্চাশ বৎসর কাল তাহা দক্ষতার সহিত করিয়াছিলেন। ১০৩. নানা কারণে এই জমিদার তনয়ার পরিচয় এস্থলে প্রদত্ত হইল না। এইরূপ ঘটনা অঘটনীয় নহে, আমরা দেখিয়াছি, জফরগড় নিবাসী একটি বালক উলঙ্গ থাকিত, ২৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত সে বস্ত্র পরিধান করে নাই; পরিধান করাইয়া দিলে তৎক্ষণাৎ খুলিয়া লইত। সে একখানা কাপড় (সাধারণতঃ যোগীয়ানা গিলাপ) গায়ে দিয়া থাকিত, উহা উপবীতাকারে হাটুর নীচ পর্যন্ত পড়িত ও তাহাতেই লজ্জা নিবারণ হইত। লোকটি এখনও জীবিত আছে কিন্তু এইক্ষণে বস্ত্র ব্যবহার করে। পূৰ্ব্বোক্ত বালিকার বস্ত্রবিদ্বেষ ইহার অপেক্ষা অধিক ছিল।