পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ “এই সাধু সৰ্ব্বদাই অতি সুমিষ্টস্বরে সঙ্গীত করিতেন। গানগুলিতে তাহার নাম যোজিত থাকায় ঐ সকল তাঁহারই রচিত, এ কথা স্পষ্টই সূচিত হয়। ঐ সকল গান বাউল সঙ্গীতের মত গৃঢ়ার্থক দেহতত্ত্ব সম্বন্ধীয় হওয়াতেই কেহ কেহ তাহাকে “বাউল" মনে করিতে পারেন কিন্তু আমাদের ধারণা এই যে তিনি “বাউল" সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন না। + + + তাহার কণ্ঠস্বর এমন সুমধুর ছিল যে তাহার গান শুনিলে পাষাণ হৃদয়ও দ্রব হইত, যে একবার শুনিত সেই মুগ্ধ হইত এবং তৎপ্রতি অনুরক্ত হইত। + + + ফলে শ্রীহট্টের পূৰ্ব্বোত্তর অঞ্চলে কৃষিজীবী মৎস্যজীবী প্রভৃতি নিম্নশ্রেণীর মোসলমানগণের মধ্যে এই দৈখোরা সাধুর গান অত্যন্ত প্রচলিত এবং সেই শ্রেণীর হিন্দুদিগের মধ্যেও ভদ্রোচিত কোনও কোনও গান গীত হইতে শুনা যায়। “দৈখোরা মোনসীর জীবনচরিত সম্বন্ধে ইতোহধিক বিশেষ কিছু জানিতে পারা যায় না। বড় বেশী দিন হয় নাই, তিনি নশ্বরজগত পরিত্যাগ করিয়া অনন্ত ধামে চলিয়া গিয়াছেন, তথাপি তাহার তিরোভাবের সন তারিখ জানা যায় না। + + + যাহা হউক, দৈখোরা মহাত্মার গান গুলি১১০ তাহাকে অমর করিয়া রাখিবে।”১১১ মুরারি গুপ্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ৩য় ভাগ ১ম খণ্ড ৫ম অধ্যায়ে মুরারি গুপ্তের প্রসঙ্গ উথাপিত করিয়াছি। বৈদ্যবংশীয় মুরারিগুপ্ত শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রতি পরম আসক্ত ছিলেন। উভয়েই শ্রীহট্টবাসীর সন্তান, নবদ্বীপের এক পল্লীতে উভয়েরই বাস, এবং উভয়েই তত্ৰত্য এক টোলে অধ্যয়ন করিতেন। গঙ্গাদাস পণ্ডিতের টোলে মুরারির ন্যায় যুবক হইতে নিমাইর ন্যায় বালক পৰ্য্যন্ত পড়িত। মুরারি বয়সে নিমাই হইতে অনেক বড় হইলেও নিমাই তাহাকে উত্যক্ত করিতে ছাড়িতেন না। এই গঙ্গাদাসের টোলে কৃষ্ণানন্দ প্রভৃতি আরও বহুতর ছাত্র পড়িতেন, কিন্তু নিমাইর যত আক্রোশ তাহার স্বদেশী এই মুরারির প্রতি । নিমাই যখন ক্রীড়াশক্ত বালক, তখনও মুরারির প্রতি তাহার দৃষ্টি ছিল; তখন একদিন মুরারি সঙ্গিগণ সহ অদ্বৈতবাদ আলোচনা করিতে করিতে পথে যাইতেছিলেন, কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়াই পশ্চাদিকে হাস্য কলরব শুনিতে পাইলেন। চাহিয়া দেখেন যে, নিমাই তাহাকে বিদ্রুপ করিতে করিতে সঙ্গীসহ পশ্চাৎ আসিতেছেন। তিনি যেমন হাত নাড়িয়া তত্ত্বালোচনা করিতেছেন, নিমাইর অভিনয়ও ঠিক তদ্রুপ হইতেছে। দেখিয়া মুরারির রাগ হইল, ১১০. এই মোসলমান সাধক-কবি-কৃত একটি সঙ্গীত নমুনাস্বরূপ এই স্থানে দেওয়া গেলঃ “আমি মিছা কলঙ্কিনী সংসারে । সখীরে, পরাণ বন্ধে ছাড়িয়া গেল আমারে (ধুয়া) বৃন্দাবনে মধুপুরে হয় গো রসের খেলা। তাহে হয় মদনজুলো হায় হায় হায়। এগো শুকনা কমল শুকাইয়া গেল, পায় নামদু ভমরায়॥ মধুপুরে গেলা হারি না আসিলা আর । হইল গোকুল অন্ধকার হায় হায় হায়॥ এগো করণে সুখ চারিণী টুরে ভ্রমর নিরলে। দৈখোরা পাগলে বলে আল্লার নাম সার। মিছা ভবের বাজার হায় হায় হায় । কি জোবাব দিবায় মনা! কবর হাসরে॥" ১১১. ১৩১৮ বাং কাৰ্ত্তিকের ১ম পক্ষের “প্রভাতে” অধ্যাপক শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য বিদ্যানিবাস মহোদয় কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধ হইতে জীবনচরিত ও টীকায় উল্লেখিত সঙ্গীতটি উদ্ধৃত হইল।