পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১২১ রাজারাম জলডুবের রাঢ়জাতীয় শিবরামের বংশে (তদীয় দশম পুরুষে) রাজারামের উদ্ভব হয়। রাজারামের পিতার নাম সাধু। সাধুতে সাধুতা, পরদুঃখকাতরতা ও ন্যায়দর্শিতা প্রভৃতি গুণ যথেষ্ট ছিল। পিতৃগুণ পুত্রে বহুল পরিমাণে দৃষ্ট হইত, তদ্ব্যতীত রাজারামের উপাৰ্জ্জন চেষ্টা, পটুতা ও পরিশ্রম-পারগতা অসাধারণ ছিল। শুধু কায়িক পরিশ্রমে ন্যায়পথে থাকিয়া রাজারামের যে অর্থ উপাৰ্জ্জিত হয়, তাহার পরিমাণ সামান্য ছিল না, একজন প্রধান ধনী বলিয়া জলডুবে রাজারামের নামডাক হইয়াছিল; এই ধন তাহার একজীবনেই আজ্জিত হয়। রাজারামের উপাৰ্জ্জিত অর্থের সদ্ব্যয়ও তৎকর্তৃকই হইয়াছিল। তখন তৎসমাজে পূজাপাৰ্ব্বণ সদ্ব্যয়ের একমাত্র পন্থা বলিয়া পরিজ্ঞাত ছিল। স্বগীয় বিষহরি পূজা, কপিলদান, ভূদান, বৃক্ষমূলে স্বগীয় কালাচাঁদ দেবতার আসন স্থাপন, আখড়া প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি বহুবিধ কার্য্যেই তাহার অপরিমিত অর্থ ব্যয়িত হয়। তদ্ব্যতীত ব্রাহ্মণ বৈষ্ণবে দান, দেবসেবা, মহোৎসব, শ্ৰীক্ষেত্রাদি তীর্থদর্শন ইত্যাদি সৎকাৰ্য্যও তাহার কম ছিল না। এ সকল সৎকার্য্যের জন্য তাহার নাম তত্রতা লোকের স্মৃতিপথারূঢ় হইয়া রহিয়াছে এবং তাহাই তাহার অধস্তন বংশীয়গণকে গৌরবাৰিত করিতেছে। পূৰ্ব্বপুরুষের অর্জিত ধনসম্পত্তি যেমন উত্তরাধিকারীসুত্রে ভোগে লাগে, পূৰ্ব্বপুরুষের কৃত সৎকীৰ্ত্তিও তদ্রুপ পরবৰ্ত্তিগণের প্রভূত হিতসাধন করে। রাজারামের ছয়পুত্র, তন্মধ্যে সৰ্ব্বকনিষ্ঠ পুত্র জগন্নাথের জ্যেষ্ঠ তনয় হইতে আমরা রাজারামের কীৰ্ত্তি-কথা প্রাপ্ত হইয়াছি। রাজীব লোচন দাস মৈনা নিবাসী পণ্ডিত রাজীব লোচন দাস আধুনিক উচ্চশিক্ষা প্রাপ্ত না হইলেও স্বচেষ্টায় ও প্রগাঢ় অধ্যয়নে পাণ্ডিত্যলাভ করিয়া বিদ্বৎসমাজে পরিচিত হইয়াছিলেন। করিমগঞ্জ শহর যখন প্রথম প্রতিষ্ঠিত হইয়া নদীর উত্তরতটে জকিগঞ্জ নামক স্থানে ছিল, তখন তথাকার মাইনর স্কুলে, তিনি কিছুদিন প্রধান পণ্ডিতের কাজ করিয়াছিলেন। এই সময়ে তিনি “পদ্যপ্রসূন" নামে একখানা কবিতা পুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশ করেন (১২৮৫ বাংলা ) স্বচেষ্টায় সংস্কৃত ভাষাতেও তাহার অধিকার জনিয়াছিল। শ্রীহট্ট শহর হইতে প্রকাশিত "শ্রীহট্ট দর্পণ” মাসিকপত্রে তিনি “দৃষ্টান্ত শতক" নামক বিরল-প্রচারিত সংস্কৃত উপাদেয় গ্রন্থ খানা স্বকৃত অনুবাদ সহ ক্রমশঃ প্রকাশিত করিয়াছিলেন, (১৩০৬ বাংলা ) তিনি তখনকার শ্ৰীবিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকা, সজ্জনতোষণী, আনন্দবাজার প্রভৃতি বৈষ্ণব পত্রে রাশি রাশি বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম সম্বন্ধীয় প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন। বৈষ্ণব সাহিত্যে তাহার অনুরাগের নিদর্শনস্বরূপ কবি লোচন দাসের শ্রীচৈতন্য মঙ্গল গ্রন্থ তাহারই সম্পূর্ণ অর্থব্যয়ে বহরমপুর-রাধারমণ যন্ত্ৰাধ্যক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তিনি পদসমুদ্র নামক মহাগ্রন্থ প্রকাশের ব্যয়বহনে স্বীকৃত হইয়া অগ্রিম ৫০ টাকা প্রেরণ করিয়াছিলেন, কিন্তু উদ্যোক্তার পরলোকগমন ঘটায় উহা হইয়া উঠে নাই। এই সময়ে তিনি একজন গোস্বামী সন্তানের বিবাহ ব্যয় এবং একজন ব্রাহ্মণ তনয়ের উপনয়ন ব্যয় সম্পূর্ণ বহন করিয়া স্বীয় ধৰ্ম্মনিষ্ঠার পরিচয় প্রদান করেন। “পঞ্চাশোদ্ধে বনং ব্রজেৎ" ইতি নীতি স্মরণে বানগ্রন্থধৰ্ম্মের অনুকরণে তিনি ৫২ বৎসর বয়সে সস্ত্রীক বৃন্দাবনে গমন করেন। তথায় প্রায় দুই বৎসর পরমানন্দে বাস করার পর গণ্ডমালা রোগে শয্যাগত হইয়া পড়েনও মৃত্যুর কয়েক মাস পূৰ্ব্বে ভেখআশ্রয়পূৰ্ব্বক রাধাপদ দাস নাম ধারণ করেন। এই সময় খাওয়া পড়ার জন্য যৎসামান্য অর্থ স্ত্রীকে দিয়া অবশিষ্ট সমুদয় অর্থ (১২০০০ টাকা) গুরুদেবের পদে সমর্পণ করিয়া বিষয় হইতে সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত হন। ৪২২