পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ তিন বৎসর অতিবাহিত করেন, তন্মধ্যে একবৎসর শ্যামকুণ্ডে ছিলেন। তারপর ফারুণ মাসে সূৰ্য্য গ্রহণোপলক্ষে তথা হইতে কুরুক্ষেত্রে যাত্রা করেন, কুরুক্ষেত্রে গ্রহণোপলক্ষে গৃহত্যাগী বহুতর তপস্বী একত্রিত হইয়াছিলেন, ইহাদিগকে দেখিতে পাইয়া তিনি পরম আনন্দ লাভ করেন। তাহার পর তিনি হরিদ্বার, বদরিকাশ্রম, গঙ্গোত্রী প্রভৃতি তীর্থদর্শনপূৰ্ব্বক নেপালরাজ্যের পথে মিথিলাতে গিয়া উপস্থিত হন। মিথিলা হইতে গয়া ও তথা হইতে কাশী দর্শনান্তর, দেশে আসিবার মানসে পূৰ্ব্বাভিমুখে ক্রমাগত চলিয়া ঢাকা শহরে আসিয়া উপনীত হন। শহরের দক্ষিণাংশে ফরিদাবাদে তিনি উপস্থিত হইলে তথায় সমবেত কতিপয় বৈষ্ণবসহ তাহার দেখা হয়, বৈষ্ণববর্গ রামকৃষ্ণের মুখে অবিরত “পূৰ্ণব্রহ্ম" ইতি ধ্বনি শ্রবণে তাহাকে অসম্প্রদায়ী বোধ করেন। কিন্তু অনতিবিলম্বেই তদীয় অত্যদ্ভুত মহিমা তাহাদের গোচরীভূত হয়, তাহাকে পরম সাধুজ্ঞান তখন সকলেই বিশেষ সমাদর ও ভক্তি প্রদর্শন করেন। উৎসব রায় নামে ত্রিপুরার জনৈক রাজা রাজ্যসংক্রান্ত বিরোধবশতঃ উপদ্রুত হইয়া ঢাকায় গিয়া বাস করিতেছিলেন, তিনি এই সাধুর সংবাদ শ্রবণে তৎসমীপে গমন করেন ও সাধুজনোচিত সদ্ব্যবহার এবং অদ্ভুত মহিমা দর্শনে বিক্ষিত হন, রামকৃষ্ণের প্রতি তাহার অত্যন্ত ভক্তি জন্মে, ফরিদাবাদে উৎসব রায়ের কতকটা ভূমি ছিল, তাহা তিনি রামকৃষ্ণ গোসাঞিকে দান করেন ও তাহার কাছে দীক্ষিত হন। ইহাতেই ফরিদাবাদে রামকৃষ্ণ গোসাঞির আখড়া স্থাপিত হয়। ঢাকা হইতে রামকৃষ্ণ কুমিল্লা, জোয়ানশাহী প্রভৃতি হইয়া এবং তত্তৎস্থানে বহুশিষ্য রাখিয়া পরে মাছুলিয়াতে আসিয়া পৌছেন। বিহঙ্গমের ন্যায় মুক্তবাতাসে ৩৬ বৎসর বিচরণ করিয়া ১৬৪০ খৃষ্টাব্দে তিনি আখড়াতে উপস্থিত হন। ইহার কিঞ্চিৎ পূৰ্ব্বে শান্ত গোসাঞি লোকান্তরবাসী হওয়ায় গুরুর সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল না। এবং রামকৃষ্ণকেই তখন গদীতে বসিতে হইল। রামকৃষ্ণ গদীতে বসিলে, চুম্বক যেমন লৌহকে আকর্ষণ করিয়া থাকে, সেইরূপ নানাস্থানে ভক্তাভক্তনিৰ্ব্বিশেষে বহুলোক আসিয়া তাহার শিষ্য হইতে লাগিল। তদীয় গুণাবলী শ্রবণে তরফের অন্যতম জমিদার সৈয়দ হুসেন আলী ১৩৭ তাহার সহিত দেখা করিতে আসিলেন, রামকৃষ্ণ জমিদার তনয়কে উপযুক্ত সম্ভাষণের সহিত আসন প্রদান করিলেন। হুসেন আলী বসিলেন এবং সাধুর পরীক্ষার উদ্দেশ্যে, তাহাকে উপহার দেওয়ার উপলক্ষে, হিন্দুর অভক্ষ্য দ্রব্যাদি প্রদান করিলেন। রামকৃষ্ণ একটি শঙ্খবাদন পুরঃসর উপহার গ্রহণ করিলেন। আচ্ছাদন উন্মোচন করিলে দৃষ্ট হইল যে পাত্রের মধ্যে মিছরি, চিনি, কদলী প্রভৃতি খাদ্য দ্রব্য রহিয়াছে। হিন্দুর অস্পৃশ্য কোন বস্তুই নাই। এতদৃষ্টে সৈয়দ সাহেব রামকৃষ্ণকে প্রকৃত সাধুপুরুষ জ্ঞান করিয়া, পরীক্ষা করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করিলেন। এই সময় হইতে দেশে রামকৃষ্ণের সুখ্যাতি অত্যন্ত বৰ্দ্ধিত হইয়া উঠে। এইরূপে কিছুদিন অতীত হইলে বঙ্গীয়া নবাব কর্মচারী ইমামকুলি নামে দস্যবৃত্ত জনৈক মোসলমান শ্রীহট্টে আগমন কালে, রামকৃষ্ণ মহিমাশ্রবণে তাহার নিকট উপস্থিত হন। তিরোহিত হয়। ব্যাধিযন্ত্রণা বিদূরিত হইলে, কুলির এক দুষ্টবুদ্ধি জন্মিল, ভাবিলেন যে এই সাধুকে সঙ্গে রাখিলে আর কখনও রোগ-যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে না। সুতরাং তিনি রামকৃষ্ণকে আপন দেশে লইয়া যাইতে মতলব করিয়া, প্রত্যাগমন কালে তাহাকে সঙ্গে যাইতে অনুরোধ করিলেন। রামকৃষ্ণ গোসাঞি আখড়াত্যাগ করিয়া অন্যত্র যাইতে অস্বীকৃত হইলেন, তখন কুলি তাহাকে জোর করিয়া, বাধিয়া লইয়া নৌকাপথে দেশে চলিলেন। সনাতন ও ব্রহ্মনামক শিষ্যদ্বয় তাহার অনুসরণ করিলেন। ১৩৭.ইনি তরফের কোন বংশীসমূত ছিলেন–জানা যায় নাই।