পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড গঙ্গারামের পুঠিয়া জয় সুপ্রসিদ্ধ গঙ্গারাম দেশে ব্যাকরণাদি অধ্যয়ন পূৰ্ব্বক বেদাধ্যয়ন মানসে দ্রাবিড় দেশে গমন করেন ও যতীর আচার অবলম্বনে সাত বৎসর তথায় অবস্থিতি করিয়া অধ্যয়ন সমাপন পূৰ্ব্বক কাশীতে উপস্থিত হন। কাশী চিরদিন বিদ্বান ব্যক্তির আদর করিয়াছে; গঙ্গারাম আদৃত না হইবেন কেন? অনেক দণ্ডী, অনেক পণ্ডিত, নূতন বিদ্যা-বিলাসীর নাম শুনিয়া আসিলেন; কিন্তু হায়, তাহার গৰ্ব্ব চূর্ণ করিতে আসিয়া স্বয়ংই হতগৰ্ব্ব হইতে লাগিলেন ১২ শ্রীহট্টবাসী গঙ্গারাম কাশীবিজয়ী পণ্ডিত ছিলেন। কাশী বিজয়ান্তে গঙ্গারাম সগৌরবে দেশে প্রত্যাগমন কালে পুঠিয়া রাজধানীতে উপস্থিত হইলেন। পুঠিয়া-রাজের মাতৃবিয়োগ হইয়াছিল এবং কাশী প্রভৃতি স্থানের পণ্ডিতবর্গ রাজমাতার শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রিত হইয়া আসিতেছিলেন। গঙ্গারাম বিদেশী ছাত্র, ঐ শ্রাদ্ধে তাহার নিমন্ত্রণ হয় নাই, এই জন্য তিনি কাশীর এক পণ্ডিত বন্ধুর সহ ছদ্মবেশে পুঠিয়াতে আসিবেন। সেই পণ্ডিত সভায় নানা শাস্ত্রের বাদবিতন্ডা হইতেছিল । গঙ্গারাম মলিনবেশে এক প্রান্তে উপবিষ্ট হইয়া শুনিতেছিলেন । কিছুক্ষণ পরে কোন সিদ্ধান্ত-বিরুদ্ধ কথা শুনিয়া তাহার অসহ্যবোধ হইল: তিনি সতেজে গৰ্জ্জিয়া উঠিলেন। তখন সকলেরই সচকিত-দৃষ্টি তাহার উপর পতিত হইল; সেই দীনবেশী তখন সংস্কৃত ভাষা অবজ্ঞায় সহিত বলিলেন–“মহাত্মগণ, ভয় নাই, আমি মনুষ্য।" তারপর তিনি অপূৰ্ব্ব বাশ্বিন্যাস প্রকটিত করিয়া, শাস্ত্ৰ-সাগর মন্থন পূৰ্ব্বক অদ্ভুত প্রতিভাবলে মধুময়ী সংস্কৃত ভাষায় বক্তৃতা দ্বারা পণ্ডিত মণ্ডলীকে স্তম্ভিত ও তাঁহাদের বাক্যে দোষ প্রদর্শন করিলেন। পণ্ডিত মণ্ডলীর প্রত্যুত্তরের আর অবসর রহিল না; তখন তিনি সুললিত বাক্য পরস্পরায় সুমীমাংসা করিয়া তাহাদিগকে আপ্যায়িত করিলেন। পরদিন পণ্ডিতবর্গ পুনঃ একত্র সমবেত হইলেন; কিন্তু গঙ্গারামের সম্মুখে সবারই প্রতিভা মলিন হইয়া গেল! তৃতীয় দিনও পণ্ডিতবর্গের জেদ বজায় থাকিল না! তৃতীয় দিনে জয়লাভ করিলে, সমবেত পণ্ডিতমণ্ডলী অকপটে গঙ্গারামের জয়ধ্বনি দ্বারা সভা মুখরিত করিয়া তুলিলেন । শিরোমণি সভাজয় করিয়া “সবস্ত্র বিদায়" প্রাপ্ত হইলেন ১৩ শ্রীহট্টের গঙ্গারাম দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত ছিলেন । শ্ৰাদ্ধ অবসানে পুঠিয়ারাজ গঙ্গারামকে ছাড়িয়া দিলেন, নিজ সভায় সভাপণ্ডিতরূপে রাখিতে বিশেষ যত্ন করিতে লাগিলেন। গঙ্গারাম রাজানুরোধ ত্যাগ করিতে না পারিয়া কিছুকাল পুঠিয়া রাজধানীতে অবস্থিতি করিলেন। এই সময়ে তিনি যোগানুষ্ঠানে নির্দিষ্ট সময় নিভৃতে অবস্থিতি করিতেন, কাজেই রাজসমীপে থাকিতে ইচ্ছা না থাকায়; দেশে আসিবার অভিপ্রায় করিলেন ও দেশে চলিলেন। তিনি নৌকাযোগে আসিয়াছিলেন। বাড়াতে আসিয়া যখন পৌছলেন, তাহার ১১. “তস্য পুত্র ন্যায়ালঙ্কার রঘুনাথ কলি । কবি মণ্ডলীতে যথা গ্রহ মধ্যে রবি॥"-শ্রীচৈতন্যরত্নাবলী । ১২. “কাশীবাসী দণ্ডী ঋষি বেদবিদ যত । সমূহ হইল সৰ্ব্ব শাস্ত্রে পরাভূত"-শ্রীচৈতন্য রত্নাবলী । ১৩. “কত শত পণ্ডিত সমস্ত শাস্ত্র জ্ঞানী । পরাজিত হৈয়া গল পরাজয় মানি। বস্ত্রের সহিত সেই মুদ্রা সমুদয় । প্রাপ্ত হন শিরোমণি সভা করিয়া জয়" -শ্রীচৈতন্য রত্নাপলী :