পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ জগন্মোহন গোসাঞিই সম্প্রদায়ের প্রবৰ্ত্তক, ইহা জগন্মোহনের জীবন চরিতেই বলা হইয়াছে। মধ্বাচার্য্যের নামে যেমন প্রাচীন ব্রহ্মসম্প্রদায় সংজ্ঞিত হয়, রুদ্র সম্প্রদায় যেমন পরবত্তী বল্লভাচার্য্যের নামে পরিচিত এবং সনক সম্প্রদায় নিস্বাদিত্যের নামেই আখ্যাত, তদ্রুপ জগন্মোহনী সম্প্রদায়ও জগন্মোহনের পরাপর শিষ্য (তাহার চতুর্থ স্থানীয়) রামকৃষ্ণের নামেও কখন কখনও আখ্যাত হইয়া থাকে ॥১৪১ রামকৃষ্ণ গোসাঞি সম্বন্ধে নানা জনশ্রুতি আছে। একটি মোসলমান ফকির তাহাকে চাতুৰ্য্যজালে আবদ্ধ করিয়া শিষ্য করিয়াছিল বলিয়া যে জনশ্রুতি আছে তাহা যে একেবারে মিথ্যা, তাহা সহজেই বোধ হয়। বিথঙ্গলে রামকৃষ্ণ ১২ বৎসর কাল অবস্থিতি করেন। বার বৎসর অতীত হইলে একদা তিনি দেহত্যাগের সময় সমুপস্থিত হইয়াছে বলিয়া শিষ্যবৰ্গকে ংবাদ দেন; তখন শত শত শিষ্য ও অনুরাগী ভক্তে বিথঙ্গল পূর্ণ হইয়া গেল, রামকৃষ্ণের অভিপ্রায় মতে তাহারা সংকীৰ্ত্তন আরম্ভ করিলে, তিনি ধীরে ধীরে মধ্যস্থানে গিয়া বসিলেন, যোগের প্রণালী অনুসারে আসনগ্রহণ করতঃ প্রাণাবায়ু নিরোধ করিয়া বাহ্যজ্ঞান বিরহিত হইলেন ও কিছুক্ষণ পরেই সেই সহস্র ভক্তের কীৰ্ত্তনমণ্ডলী মধ্যে সমাধি অবলম্বনে ১০৫৯ বাং (১৬৫২ খৃঃ) মাঘী পূর্ণিমাযোগে ৭৬ বৎসর বয়ক্রম কালে তিনি দেহত্যাগ করিলেন। রামচন্দ্র পাল শ্রীহট্টের অন্তর্গত হবিগঞ্জ উপবিভাগের পৈল গ্রামে রামচন্দ্র পাল জন্মগ্রহণ করেন, তিনি একজন কৰ্ত্তব্যনিষ্ঠ, চরিত্রবান পুরুষ ছিলেন। প্রথম বয়সে তিনি ঢাকায় সদর আলার দফতরে পেস্কার করিতেন, হাকিম তাহাকে অত্যন্ত মেহের চক্ষে দেখিতেন। তৎকালে উৎকোচ গ্রহণ করা কেহ গ্রানিজনক জ্ঞান করিত না; কিন্তু রামচন্দ্র ঈদৃশ অন্যায়াচরণ অতি ঘৃণনীয় মনে করিতেন। একদা ভাওয়ালের জমিদার কালীচরণ রায়ের সহিত নীলকর ওয়াটু সাহেবের একটা মোকদ্দমা বাধে, এই মোকদ্দমার সরেজমিন তদন্তের ভার হাকিম ইহার উপরই অর্পণ করেন। রামচন্দ্র সরেজমিনে উপস্থিত হওয়া মাত্রই কালীচরণের পক্ষীয় লোক তাহাদের স্বপক্ষে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ২০০০ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদান করিল। উৎকোচ গ্রহণ না করিলে তখন তাহাকে প্রাণশঙ্কটে পড়িতে হইত, কাজেই বিপদে পড়িয়া তাহাকে বলিতে হইল যে টাকাটা ঢাকায় পাঠাইয়া দিলেই নিরাপদে পাওয়া যাইবে । এই উপায়ে তিনি ধৰ্ম্ম ও প্রাণ বাচাইয়া চলিয়া আসিলেন। যদিও অবস্থানুসারে রিপোর্টটা কালীচরণের পক্ষে দিতে হইয়াছিল, তথাপি প্রেরিত ২০০০ টাকা তিনি পরে ফেরত পাঠাইয়া দিয়াছিলেন । এই কথাটা সকলেই শুনিয়াছিল এবং আশ্চৰ্য্য হইয়াছিল। সদর আলার কর্ণেও কথাটা গিয়াছিল, শুনিয়া তিনি রামচন্দ্রকে বিষয়-বুদ্ধি-বিহীন বলিয়া প্রকাশ করেন। ফলতঃ এই ব্যাপারে কিছু প্রাপ্তির সম্ভাবনা মনে করিয়াই তিনি স্নেহভাজন রামচন্দ্রকে এই তদন্তে প্রেরণ করেন। তাহার চরিত্র যে কিরূপ উন্নত ছিল, এই একটিমাত্র উদাহরণেই তাহা বুঝা যায়। ১৪১. ভারতবষীয় উপাসক সম্প্রদায় গ্রন্থের ১ম ভাগে অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয় লিখিয়াছেন—“রামকৃষ্ণ গোসাই নামে এক ব্যক্তি এই সম্প্রদায় প্রবৰ্ত্তিত কবেন।" তিনি একটু পরে ইহাও লিখিয়াছেন—“রামকৃষ্ণের সময়েই এই মত সমধিক প্রচারিত হয়।” ঐতিহাসিক হান্টার সাহেব লিখিয়াছেন-A new religious sect has spring up among the Kailbartas founded by a certain Ramkrishna Gosain a member the that sect &c, &c-Imperial Gazetteer of India. 2nd, Ed. p 149. এই উভয় গ্রন্থকারেরই কোন কোন বিষয়ে ভ্রম হইয়াছে, বলা হইয়াছে, তাহা বলা বাহুল্য।