পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড যাইতেছে, এমন সময় প্রতপ্ত কাঞ্চন-লাঞ্ছিত কান্তি গৌরবিগ্রহ পিতামহ গৃহে উপনীত হইয়া বহিৰ্ব্বাটিকায় ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; বোধ হইল যেন ঐ স্বর্ণ প্রতিমার অঙ্গ-কান্তিতে দিক প্রভাসিত হইয়া উঠিয়াছে, হরিত পত্রাবলী পীত-দীপ্তি প্রাপ্ত হইয়াছে। পরমানন্দ-পত্নী সুশীলাদেবী এই নবীন উদাসীনকে প্রথমেই দেখিতে পাইলেন ও জরাতুয়া শাশুড়ীকে তাহার আগমন সংবাদ বলিলেন। বৃদ্ধা ধীরে ধীরে কোন প্রকারে আসিলেন; দণ্ডীকে তাহার মনুষ্য বুদ্ধি হইল না। তিনি নারায়ণ জ্ঞানে তাহাকে স্তুতি করিতে লাগিলেন। তখন শ্রীচৈতন্য চন্দ্রই তাহাকে নিজ পরিচয় দিলেন । বৃদ্ধার সাধ মিটিল। সুশীলা পরম যত্নে পায়স পিষ্টক প্রস্তুত পূৰ্ব্বক প্রভুকে আহার করাইলেন। নাতির সহিত নানাবিধ আলাপ হইল, সাংসারিক সুখদুঃখের কথাও বাকি থাকিল नी । த் উপেন্দ্র মিশ্র ধনী ছিলেন বটে, কিন্তু তৎকালে নানা কারণে তৎপুত্ৰগণের২২ সাংসারিক অবস্থা হীন হইয়া পড়িয়াছিল, বৃদ্ধা তাই নাতির কাছে সে কথাও বলিলেন। এইরূপে শ্ৰীগৌরাঙ্গের সহিত বৃদ্ধার যখন কথা হইতেছিল, স্নেহের ভরে বৃদ্ধার, নাতির প্রতি তখন সন্ন্যাসী বুদ্ধির লেশ মাত্রও ছিল না; স্নেহের গাঢ়তায় তখন নিৰ্ম্মল-হৃদয়া বৃদ্ধার নেত্রে তাহার স্নেহদ্র-মধুর অপূৰ্ব্ব রূপ প্রতিভাত হইল, মেহাবেশে বৃদ্ধা দেখিলেন যে গৌরসুন্দর সন্ন্যাসী বেশে নহেন। যেন গৃহস্থের সরল ছেলে। বৃদ্ধার তখন বাহ্যজ্ঞান নাই, তিনি যেন এক অজানা রাজ্যে চলিয়া গেল, অমনি শ্রীগৌরাঙ্গের প্রতি তাহার ঈশ্বর-বুদ্ধির উন্মেষ হইল। বৃদ্ধার চক্ষের সম্মুখে হঠাৎ যেন স্বর্ণ-কান্তি ইন্দ্ৰিনীলমণিদুতিতে পরিবত্তিত হইয়া গেল! এ কি? ইহা কি জরাগ্রস্তা শোভাদেবীর দৃষ্টিবিভ্রম? না তাহার মানসিক ভাব-সঞ্জাত চিত্ত বিক্রিয়ার ফলঃ বৃদ্ধা ভক্তি-পূতচিত্তে স্ততি করিতে লাগিলেন। “দৃষ্ট রূপদ্বয়ং সাপি বিক্ষিতা ভক্তিসংযতা। নমস্তুভাং ভগবতে ইত্যাহ পুলকাবৃতা।”-শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যেদয়াবলী। আর শ্ৰীগৌরাঙ্গ তথায় অবস্থান করিলেন না, বিদায় লইয়া চলিলেন ও বৃদ্ধগোপেশ্বর শিব এবং অমৃতকুণ্ড দর্শন পূৰ্ব্বক চলিয়া আসিলেন। বৃদ্ধ গোপেশ্বরের কথা, শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে ১ম ভাগ ৯ম অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে; অমৃতকুণ্ডের চিহ্নমাত্রও এক্ষণে দৃষ্ট হয় না। ঢাকাদক্ষিণে শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য বিগ্ৰহ মহাপ্রাণ মহাপুরুষ-সকাশে যাচঞা অমোঘ হয়। বৃদ্ধা স্বজনের জন্য ধন প্রার্থনা করিয়াছিলেন। শ্ৰীমহাপ্ৰভু তাহাকে দুটি রত্ন দিয়া ঢাকাদক্ষিণ হইতে প্রস্থান করিলেন। সে রত্ন আর কিছু নহে, যে রূপ বৃদ্ধার নয়নে নয়নে লাগিয়া রহিয়াছিল, হিয়ার মাঝারে পশিয়া গিয়াছিল, ইহা তাহাই শ্ৰীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য বিগ্রহ। এই দুই রূপই বৃদ্ধার অন্তিম কালের সম্বল হইল; বৃদ্ধা সেই দুই বিগ্রহ প্রকাশ করিলেন। সেই দুই বিগ্রহ তদবধি ঢাকাদক্ষিণে পূজিত ২২. এই সময়ে তাহার মাত্র দুই পুত্র জীবিত ছিলেন, প্রাচীন মনঃসন্থোসণী গ্রন্থে উক্তি-বাক্যে তাহা জানা যায়। “তান যেই দুই পুত্র অদ্য বৰ্ত্তমান। আদ্য তান সেই সব আছয়ে সন্তান । বৃত্তিহীন হইয়া তারা বাচিবে কেমনে।"-ইত্যাদি।