পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড তৎপাঠে তাহাকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া পাঠাইলেন। তখন তিনি নিমন্ত্রণ রক্ষার্থ উপস্থিত হন। একটি বাঙ্গালী পণ্ডিতকে সভায় উপস্থিত হইতে দেখিয়া পশ্চিমা পণ্ডিত বর্গ অবজ্ঞার হাসি হাসিলেন। কিন্তু যখন বিচার আরম্ভ হইল,—বলিতে আনন্দ হয়, সভা-সমাসীন সে সকল সুশিক্ষিত পণ্ডিতকে শ্রীহট্টের রামকিঙ্কর তখন অবলীলাক্রমে পরাস্ত করিয়া বাঙ্গালীর নাম রক্ষা করিয়া আসিলেন।৯ পরাজিত পণ্ডিত মধ্যে অনেকেই তাহার পাণ্ডিত্যে এতাদৃশ বিমোহিত হইয়াছিলেন যে, তাহার কাছে আসিয়া কেহ কেহ শিষ্যত্ব স্বীকার করিলেন। এইরূপ কাশীতে তাহার এক ক্ষুদ্র টোল স্থাপিত হয়। কাশীতে কিছুদিন অবস্থিতির পরে একদা শিবচতুর্দশীতে উপবাসী অবস্থায় নিশীরাত্রে তাহার মৃত্যু হয়। বিদ্যারত্নের পুত্রের নাম রামরমণ, ইনি জ্যোতিষিক পণ্ডিত ছিলেন; নানাবিধ প্রয়োজনীয় “বচন” সংগ্রহক্রমে তিনি "জ্যোতিষ সার নির্ণয়” নামে গ্রন্থ সঙ্কলন দ্বারা স্মরণীয় হইয়া রহিয়াছেন। রেঙ্গার ভরদ্বাজ ভরদ্বাজ গোত্রীয় আর এক বংশীয় ব্রাহ্মণ রেঙ্গায় আছেন, তাহাদের সম্বন্ধে এইমাত্র অবগত হওয়া যায় যে, আটপুরুষ পূৰ্ব্বে রামনাথ আসিয়া অবস্থিতি করেন; ইহার পুত্রের নাম রামচন্দ্র ভট্টাচার্য্যে, তাহার পুত্র শ্রীনাথ বিদ্যাবাগীশ, তৎপুত্র হবিনাথ ভট্টাচাৰ্য্য, ইহার পুত্রের নাম রামকৃষ্ণ তর্কবাগীশ । তত্ৰত মোসলমান জমিদার বর্গ ১৭৫৩ খৃষ্টাব্দে ইহাকে এক অধিকার পত্র দান করেন, তাহার বলে তিনি তথাকার হিন্দুসমাজে “রাজপণ্ডিতি” বিদায়ের অংশ পাওয়ার অধিকার লাভ করেন। নিম্নোদ্ধৃত এই দলিল হইতে ১৬০ বর্ষ পূৰ্ব্বকার ভাষা, লেখার ভঙ্গী এবং হিন্দুর সামাজিক বিষয়েও যে মোসলমান জমিদারবর্গের প্রভাব খাটিত তাহা জ্ঞাত হওয়া যায়। অধিকার পত্র, যথাঃ– “ই আদিকীৰ্দ্দ শ্রীরামকৃষ্ণ তর্কবাগীস সদাসয়েষ্ণু লীখিতং শ্রী পরগণে রেঙ্গার জমিদারবর্গ কস্য পত্র মিদং কাৰ্য্যঞ্চাআগে—তুমি পছিম হনে ১ পড়িআ পণ্ডিত হৈআ তর্কবাগীশ উপাদ্ধি হৈআ ২ আসিয়া আমার দেশেত ৩ বান্ধিআ ৪ রহীছ ৫ এতেও তুমার মজ্জদা ৭ এই সকলে মীলিআ ৮ করিয়া দিলাম— আমার দেশের শূদ্র লোক জে আছইন ৯ এরা ১০ শ্রাদ্ধ বিবাহ কর্ণবেদ আদি যে কৰ্ম্ম করিব সে পান ১১ দিতে রাজপণ্ডিতর ইখানে ১২ পান দিতে তুমার এক গাহা ১৩ পান গুআ ১৪ বাৰ্ত্তন দিব ১৫– আর শ্ৰাদ্ধ আমি কৰ্ম্মেত ১৬ রাজপণ্ডিতরে দিতে তোমার একদান পায় ১৭ দিব ১৮ এই মান্যতা তোমারে করিআ দিলাম এবে ১৯ না করে স্বগীয় শুভ না পায় এতদৰ্থে পত্র দিলাম। ইতি ১১৬০ সালে ১০ পৌষ ।”১০ (উক্ত দলিলের পার্শ্বে "শ্ৰীমহাম্মদসফি, শ্রীজগন্নাথ দাস" প্রভৃতি আটটি দস্তখত আছে, ৯. এস্থলে বলা অসঙ্গত হইবে না যে স্বগীয় কাশীধামে বাঙ্গালীর সমাজে প্রায়শঃ শ্রীহট্টের পণ্ডিতবর্গেরই প্রাধান্য থাকিত। স্বগীয় কৃষ্ণহরি বিশারদ ও তৎপুত্র স্বগীয় গঙ্গাহার বিদ্যারত্ন এইরূপ শ্রেষ্ঠপদের শেষাধিকারী ছিলেন। ১০. শব্দার্থঃ-১. পশ্চিম হনে-পশ্চিম দেশ হইতে, ২. উপাদ্ধি হইআ-উপাধি পাইয়া, ৩. দেশেতে- দেশে, ৪. ঘরবান্ধিয়া-বাড়ী করিয়া, ৫. রহীছ-রহিয়াছ, ৬. এতে-ইহাতে, ৭, মজ্জদা-মৰ্য্যাদা, ৮. মীলিয়া-মিলিয়া, ৯ আছইন-আছেন, ১০. এরা-ইহারা, ১১. পান-নিমন্ত্ৰণ করিবার জন্য প্রেরিত পাণ, ১২. ইখানে-এইখানে, ১৩. গাহা-১০ শুপারিতে ১ গহা হয়, ১৪. পাণ গুয়া-পাণ সুপরি, ১৫. বাৰ্ত্তনদিব-নিমন্ত্রণ দিবে, ১৬, কৰ্ম্মেত-কৰ্ম্মে, ১৭, একদান-একবিদায়, ১৮. দিব-দিবে, ১৯. এবে-ইহা ।