পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড প্রভৃতি প্রস্তুত ও নৌকা পূজাদি২২ সৎকাৰ্য্য করেন। রাম গোবিন্দের ভ্রাতুষ্পপুত্র রামগঙ্গা খুল্লতাতের চেষ্টায় মহারাজ গোবিন্দ নারায়ণের সভাপণ্ডিত নিযুক্ত হন। কাছাড়া রাজ্যের ধ্বংসের পর পেন্সন প্রাপ্ত রাণী ইন্দুপ্রভা তাহার কনিষ্ঠ হরপ্রসাদকে নিজ সভাসদ নিযুক্ত করিয়াছিলেন। রাণী ইন্দুপ্রভা পেন্সন প্রাপ্ত হইয়া ও রাজোচিত ভাবে থাকিতেন ॥১৩ কমলাকাত্তের সন্তানগণ পূৰ্ব্বোক্ত গঙ্গারামের দ্বিতীয়পুত্র কমলাকান্তের সাতপুত্র হয়, তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ। বাসুদেব একজন শ্রেষ্ঠ পুরুষ ছিলেন, ইনি বিদ্বান, বুদ্ধিমান ও পরম জ্ঞানী পুরুষ ছিলেন; ইহার গুণে বিমোহিত হইয়া শ্রীহট্টের নবাব মোহাম্মদ আলী খা বাহাদুর তাহাকে “জনাবদার” উপাধির সহিত ৮/০ হাল পরিমিত ভূমি দেবত্র দান করেন। এই ৮/০ হাল ভূমি মধ্যে দেব্যচ্চনায় দ্রব্যাদি ক্রয় জন্য ৪/০ হালের উপসত্ত্ব এবং নিজ জীবিকা নিৰ্ব্বাহের জন্য ৪/০ হালের আয় নির্দিষ্ট ছিল। ঐ সনদে প্রাপককে “জরিবানা” “তীরমারা" ইত্যাদি হইতে অব্যাহতি দেওয়া হয় ১৪ ইহাতে বোধহয় যে কোন কোন স্থলে প্রাপকবর্গকে এ সকল উৎপাত ভোগ করিতে ১২. নৌকাপূজা শ্রীহট্ট অঞ্চলের একটা আড়ম্বরপূর্ণ পূজানুষ্ঠান, ইহার বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১ম ভাগে ৮ম অধ্যায়ে লিখিত হইয়াছে। ১৩. “ঐতিহাসিক চিত্র” পত্রিকা ১৩১৮ সাল-আশ্বিন-কাৰ্ত্তিকের যুগসংখ্যায় অধ্যাপক শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ মহাশয় “রাণী ইন্দুপ্রভা” প্রস্তাবে ইহার কাহিনী বর্ণনা করিয়াছেন। ১৪. উক্ত সনন্দে এই লিখিত আছে, যথা— সরকার শ্রীহট্টের অন্তর্গত বাহাদুরপুর গয়রহ পরগণার মৎসুদিগণ, চৌধুরীবর্গ ও কানুনগো সকল জ্ঞাত হইবেন যে প্রার্থী বাসুদেব ভট্টকে ৮/০ হাল জমি খারিজ-জমা করিয়া দেওয়া গেল। পরগণা মজকুরের মৌজাজাত হইতে পূজার সরঞ্জাম খরচ ও সেই জনাবদার পূজারীর খুরাখি খরচের জন্য ইহা নির্দিষ্ট করা হইয়াছে, অতএব জনাবদার পূজারী ইহাতে, পূজার সরঞ্জাম ও নিজের খরচের জন্য ব্যয় করিতে থাকে। কোন বিষয় জরিপ, জরিবানা শিকার, তীরমারা ইত্যাদি কষ্টকর বিষয় গয়রহ দেওয়া হইবে না। বৎসর নূতন সনদ তখন করা না হয়, ইহা তাগিদ জানিবা ॥১২ রবিয়সসানি ৮ জলুস। উক্ত সনদে পৃষ্ট লিপিতে লিখিত যথাঃমোং ৮/০ হাল জমি খারিজ জমা, যাহা বাসুদেবভট্ট ও তাহার পিতার খরিদ মধ্যে পরিগণিত, ইহা ঐ পূজারী জনাবদারের নিজ খরচ বাবত ও পূজার সরঞ্জাম ক্রয় বাবত বহাল করা গেল। মোং ৮/০ হাল । তন্মধ্যে পূজার সরঞ্জাম ৪/০ হাল, নিজের খরচের ৪/০ হাল, মোট তপসিলঃ-পং বাহাদুরপুর ৪ ১, পং ঢাকাদক্ষিণ ১/০, পং পঞ্চখণ্ড ১, নেগাল ১॥২, মোট ৮/০ হাল । এস্থলে “পূজারী” শব্দের প্রয়োগ ও অর্থ সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ বলা আবশ্যক। সনদে জনাবদার উপাধি প্রাপ্ত সন্তান্তবংশীয় বাসুদেব ভট্টাচাৰ্য্যকে পূজারী শব্দে সংজ্ঞিত করা হইয়াছে। অধুনা কোন কোন স্থলে বেতনভোগী দেবপূজকেরপ্রতি পূজারী শব্দ প্রযোজ্য হইতে দেখা যায়; পূৰ্ব্বে এই শব্দ হীনার্থক ছিল না, প্রকৃতিবোধাদিতে ইহার পুরোহিত অর্থ দৃষ্ট হয়; আসামের কোন কোন স্থানে পুরোহিত অর্থেই ইহা ব্যবহৃত হইয়া থাকে। মোসলমান আমলে রাজকর্মচারিবর্গ দেবসেবার অধ্যক্ষদগকে পূজার বলিয়া লিখিতেন। আমরা সাধুহাটীর গঙ্গারাম শিরোমণির বৃত্তির কাগজেও “পূজারী" শব্দের ব্যবহার দেখিয়াছি। বস্তুতঃ “পূজারী" শব্দ যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের প্রতি ব্যবহৃত হইত, বৈষ্ণব গ্রন্থাদিতে ব্যবহৃত “পূজারী গোস্বামী" ইত্যাদি উপাধি হইতেও তাহা জানা যায়। বেতনভোগী দেবপূজকেরা "দেবল" শব্দে কথিত হওয়া দৃষ্ট হয়। দেবলদের নামে কোথায় কোন সনন্দ দৃষ্ট হয় না। “পূজারী” শব্দ মোসলমান আমলে যে অর্থে ব্যবহৃত হইত, ইংরেজ আমলের প্রথমেও সেরেস্তার কাগজপত্রে দৃষ্ট হয়। পূৰ্ব্বাধ্যায়ে ঢাকা দক্ষিণের রামগতি মিশ্রের পেন্সন মঞ্জুরীর কাগজে তাহা দৃষ্ট হইবে। উহাতে দেখিতে পাওয়া যায় যে, যিনি অধ্যক্ষ ছিলেন, তাহাকেই পূজারী হইয়াছে। উত্তরাধিকারীর নামে কৌলিক উপাধি লিখা আছে। আমরা আর একখানা জনেক গোসইকে পূজারী বলা হইয়াছে। পাইয়াছি, উক্ত সনন্দের নং ৪৩২ প্রাপক-গোসাই পূজারী কসবে শ্রীহট্ট দাতা নবাব শুকুরুল্লা খা; দেবত্র ইসাকপুরে—৫ ॥২১ ভুমিমাত্র।