পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গবেষক-গবেষিকা, সাংবাদিকদের নিয়ে একসঙ্গে আলাপ-আলোচনা-কর্মশালার ব্যবস্থা করুন। তাতে ব্যাকরণ-সচেতনতা, বানানবিধি, উচ্চারণ-বিধি, সাহিত্য-পাঠের নতুন প্রকরণ নিয়ে ব্যাপক ও গভীর আলোচনা হোক। পরের পর্যায়ে কর্মশিবির হোক সমস্ত স্তরের অন্তবৃত সঙ্গতিসম্পন্ন পাঠ্যসূচি, পরীক্ষাসংস্কার ইত্যাদি নিয়ে। বাঙালির তৃতীয় ভুবন বলে নিজেদের অবস্থানকে শূন্যগর্ভ প্রশস্তি না করে তাকে সর্বতোভাবে সার্থকনামা করে তোলা হোক।

 আসুন, উপভাষার শৌর্য ও লাবণ্য এবং তার খর চলিষ্ণুতা ও লোকায়ত ব্যাপ্তি আমরা, ‘কম’ বাঙালিরা শিষ্ট চলিত ভাষায় সংযুক্ত করি। ‘আ মরি বাংলা ভাষা’ বলতে পারি যেন আরো বেশি গৌরবে ও সচেতন ভাবে। বাংলা ভাষার ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ নেমে এসেছে ইদানীং। তার মোকাবিলা করার জন্যে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও চিন্তাবিদদের মধ্যে নিয়মিত কার্যকরী বিনিময়ের ব্যবস্থা করি। গোড়া কেটে ডগায় জল ঢেলে কোনো লাভ নেই। নির্বাণে দীপে কি তৈলদান! হ্যালো মাম্মী হ্যালো ড্যাড্ডি ভ্যালেণ্টাইন ডে আর এস এম এস দেওয়া-নেওয়ার চোরাবালিতে নিমজ্জমান প্রজন্মের প্রতি কোনো দায়িত্ব যদি থাকে, তাহলে আর দেরি নয়। নকল ইংরেজিয়ানা আর হিন্দিয়ানার বুদ্বুদ-বিলাস শুধু পথভ্রষ্ট করতে পারে—এই আপ্তবাক্য বলে ওই দায় শেষ হবে না। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার নতুন দিগন্ত সন্ধান করতে হবে আমাদেরই। বেবিফুডে বিভ্রান্ত শুধু কিন্তু কিশোরেরা নয়, তাদের ধৃতরাষ্ট্র তুল্য অন্তরে-বাহিরে অন্ধ মা-বাবারাও। তাই মাতৃভাষা যে মাতৃদুগ্ধ সম, এই উপলব্ধি ফিরিয়ে আনতে গেলে ছোটোদের সঙ্গে বড়দের জন্যেও বিশল্যকরণীর ব্যবস্থা করতে হবে। আজ, এখনই, এই মুহূর্তে।

 প্রতিটি শ্রেণীকক্ষ, পাঠশালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত, বাংলা ভাষাবোধ পুনর্গঠনের পরীক্ষাগার হোক। ব্যাকরণকে অবহেলা করে নয়, ভাষা ও সাহিত্যের ধারাবাহিক ইতিহাস কিংবা উপভাষা ও ভাষার ব্যবধান ভুলে গিয়ে নয়। কোর্স সিলেবাস, মার্ক ইত্যাদির চক্রব্যুহে অভিমুন্য হয়েও নয়। আন্তরিকতা ও অধ্যবসায়ে নিজেদের শুদ্ধ করে নিয়ে।

৪৩