পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
১২

লক্ষণ দেখা গেল না। বছরের পর বছর, কেবল চারদিনের জন্য বাড়ীতে আসা-যাওয়াটা রীতিমত নাটকীয় ব্যাপার, কিন্তু বিধুশেখর আসা-যাওয়াব মধ্যে হাঙ্গামা ঢুকিতে দেয় না, যন্ত্রের মত আসে, যন্ত্রের মত চলিয়া যায়। যেন দৈনন্দিন সাধারণ কাজ—আপিসে যাতায়াতের মত। এবার আসিয়াছে সে যন্ত্রের মত, যাওয়া সম্পর্কে এরকম বাড়াবাড়ি আরম্ভ করায় সকলে অবাক হইয়া গেল। একেবারে স্তম্ভিত হইয়া গেল, যখন বাড়াবাড়িটা দাঁড় করাইয়া দিল অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায়।

 আরও তিনদিন বাঙ্গার চাল-চলন লক্ষ্য করিবার পর বলিল, ‘দ্যাখো তোমায় একটা কথা বলব ভাবছিলাম। আমার সঙ্গে যাবে?’

 ত্রিশ বছর পরে এ প্রশ্ন বুঝিতে সময় লাগে। বাঙ্গা কিছু বলিল না।

 ‘এবার তোমায় সঙ্গে নিয়ে যাব ভাবছিলাম। বুড়ো হলাম, কবে আছি কবে নেই—’

 বাঙ্গা দুচোখ বিস্ফারিত করিয়া বলিল, ‘তুমি আমায় সঙ্গে নিয়ে যাবে? আমি তোমার কাছে গিয়ে থাকবো?’

 ‘যদি তুমি রাজী হও। আমি ভাবছিলাম কি, কবে কি হয়েছিল সেজন্য এতকাল তুমিও কষ্ট পেলে আমিও কষ্ট পেলাম, এবার বাকী কটা দিন—’

 বাঙ্গার মাথা ঝিম ঝিম করিতেছিল। সে সংক্ষেপে বলিল, ‘তুমি এখনও অনেকদিন বাঁচবে।’

 বিধু বলিল, ‘কি বললে? অনেকদিন বাঁচব? বাঁচাবাঁচির কথা পরে হবে, তুমি রাজী তো?’

 ‘রাজী নই? ওগো আমি যে সারাবছর তোমার জন্য কাঁদি আর পথের পানে চেয়ে দিন কাটাই।’