পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
৩৪

প্রাচীর দিয়ে দুভাগ করা। নীচে ঘরের সংখ্যা বোধ হয় চার, কারণ মমতাদি আমায় যেভাগে নিয়ে গেল সেখানে দুখানা ছোট ছোট কুঠরির বেশী কিছু আবিষ্কার করতে পারলামনা। ঘরের সামনে দুহাত চওড়া একটু রোয়াক, একপাশে একশিট করোগেট আয়রণের ছাদ ও চটের বেড়ার অস্থায়ী রান্নাঘর। চটগুলি কয়লার ধোঁয়ায় কয়লার বর্ণ পেয়েছে।

 সে আমাকে শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে টুলে বসাল। ঘরে দুটি জানালা আছে এবং সম্ভবতঃ সেই কারণেই শোবার ঘর ক’রে অন্য ঘরখানার চেয়ে বেশী মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জানালা দুটির এমনি অবস্থান যে, আলো যদিও কিছু কিছু আসে, বাতাসের আসাযাওয়া একেবারে অসম্ভব। সুতরাং পক্ষপাতিত্বের যে খুব জোরালো কারণ ছিল তা বলা যায় না। সংসারের সমস্ত জিনিষই প্রায় এঘরে ঠাঁই পেয়েছে। সব কমদামী শ্রীহীন জিনিষ। এই শ্রীহীনতার জন্য সযত্নে গুছিয়ে রাখা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে বিশৃঙ্খলতার অন্ত নেই। একপাশে বড় চৌকী, তাতে গুটানো মলিন বিছানা। চৌকীর তলে একটা চরকা আর ভাঙ্গা বেতের বাক্সেট চোখে পড়ে, অন্তরালে হয়ত আরও জিনিষ আছে। ঘরের এক কোণে পাশাপাশি রক্ষিত দুটি ট্রাঙ্ক—দুটিরই রঙ চ’টে গেছে, একটির তালা ভাঙ্গা। অন্য কোণে কয়েকটা মাজা বাসন, বাসনের ঠিক উর্দ্ধে কোণাকুণি টাঙ্গানো দড়িতে খানকয়েক কাপড়। এই দুই কোণের মাঝামাঝি দেওয়াল ঘেঁষে পাতা একটি ভাঙ্গা টেবিল, আগাগোড়া দড়ির ব্যাণ্ডেজের জোরে কোনমতে দাঁড়িয়ে আছে। টেবিলে কয়েকটা বই খাতা, একটি অল্পদামী টাইমপিস, কয়েকটা ওষুধের শিশি, একটা মেরামত করা আর্সি, কয়েকটা ভাঁজ করা সংবাদপত্র, এই সব টুকিটাকি জিনিষ। টেবিলের উর্দ্ধে দেওয়ালের গর্ত্তের তাকে কতকগুলি বই!