পাতা:সার্বজনীন - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RS সাৰ্বজনীন এখনো যেন আগেকার যুগ রয়ে গেছে, যখন বিরাট কলকাতা সহরের অসংখ্য বাড়ীর তুলনায় বাসিন্দার সংখ্যা কম ছিল, তিরিশ চল্লিশ টাকায় কেউ দোতলা বাড়ী ভাড়া নিলে বাড়ীওলা পুলকিত হয়ে ভাবত তার কপাল বড় ভাল ! কেউ কিছু বলার আগেই গণেশ বলে, তাই কি হয় মা ? এদের কত অসুবিধা হবে। কিন্তু সকলের মত সেও খুব ভড়কে গিয়েছে বোঝা যায়। ভড়কে যাবার কথাই। ষ্টেশনের চারিদিকে একবার চােখ বুলোলেই আত্মারাম খাচা ছাড়া হবার উপক্রম করবে। সেটা আশ্চৰ্য্য নয়। কোথাও কোনদিকে তিল ধারণের স্থান নেই। এত যে ভিড় হয়েছে ষ্টেশনের ঢাকা অঙ্গনের নীচে সেটা ট্রেণে যাবার যাত্রীর ভিড় যে নয় সহজেই বোঝা যায়। তাদের মত অনেকগুলি পরিবার ষ্টেশনে বাসা বেঁধেছেভদ্র এবং চাষী পরিবার | এক একটি পরিবারের ভাগ্যে কয়েক হাত মাত্র যায়গা জুটেছে, তারই মধ্যে মাদুর পাটি বিছিয়ে হঁড়িকুড়ি বাকুস পেটরা মালপত্র নিয়ে সকলে দিন রাত্রি কাটাচ্ছে ! মেয়েদের কোন আবরু নেই, একেবারে খোলা যায়গায় এত লোকের মধ্যে তাদের চব্বিশ ঘণ্টা কাটছে। কোন কোন পরিবারের আস্তানার দিকে তাকালেই বেশ টের পাওয়া যায় যে 'দু’চারদিন এখানে মাথা গুজে তাদেব কাটে নি, কিছুকাল এখানে এই অবস্থায় বসবাস চলছে। এর মধ্যে রোগী যে কত চারিদিকে শুধু একবার চােখ বুলিয়ে নিলেই টের পাওয়া যায়। কেউ জরে ধুকছে, কেউ চাদৱ মুড়ি দিয়ে পড়ে আছে, অসুস্থ ছেলে কোলে কোন মা বিরস মুখে বসে আছে, কেউ হাওয়া করছে রোগীর মাথায় । মনে হয় একটা হাসপাতাল যেন গড়ে তুলেছে জগতের পরিত্যক্ত জীবের-ষ্টিমারের ডেকের মত