পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (তৃতীয় ভাগ).pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७७०७ ] মাতৃভক্তি ও মাতৃ উপাসনা । SGS ৩য়, আমাদের শিক্ষা বিজাতীয়, সংস্কারও বিজাতীয় ভাবে অনুপ্রাণিত। কিন্তু মাতার শিক্ষা, চিরাগত প্ৰাচীন ভাবে সম্বন্ধ, সংস্কার, পূৰ্বপুরুষগণের সদৃশ। ইহার ফল, মাতার প্রতি অজ্ঞতার আরোপ এবং শ্রদ্ধার বিশেষ অভাব । ৪র্থ, নুতন শিক্ষা প্ৰণালী আমাদিগের মন অহঙ্কারে পরিপূর্ণ করিয়া দিতেছে। অহঙ্কারী তৃষ্টয়া আমরা মৃত্যু পিতা প্রভৃতিকে লিঙ্গণ অবজ্ঞা করিতে শিখিয়ছি ; তঁহাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হইতে যেন অতিশয় লজ্জা বোধ হয় । র্তাহারা মুর্গ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, তাহারা অজ্ঞান বলিয়া তাহদের প্রতি প্ৰত্যেক কাৰ্য্যে, প্রতি কথায় তাচ্ছিল্য প্ৰকাশ করি। ৫ম ও শেষ কারণ, অনুকরণবশে আমরা শিখিয়াছি, স্ত্রীই ংসারের সর্বস্ব, পৃথিবীতে তঁহারই আদর সর্বাপেক্ষা বৈধ ও করণীয়। র্তাহার নিকট স্বৰ্গাদপি গরীয়সী মাতাও ছোট । সুতরাং সেই পত্নীর অনুরোধে বা তঁহার সুখের জন্য, অথবা তাহার প্ররোচনায় সেই মাতার নির্যাতন বিশিষ্টরূপে অনুষ্ঠিত হইতেছে। ইহার বিষময় পরিণাম ংসারের দুৰ্গতি এবং আমাদের বর্তমান মানসিক ও নৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ! এক বিষয়ে সাতকড়ি বাবুর সহিত আমাদের মতদ্বৈধ আছে। তিনি যে লিখিয়াছেন, “স্বভাবতঃ কলহপ্ৰিয়া ও কটুভাষিণী মাতৃগণ সহজে কলহে প্ৰবৃত্ত হন না অথবা আকারণে কটু বাক্য প্রয়োগ করিয়া লোকের মনে বেদনা দেন না।” একথা আমরা স্বীকার করিতে পারিলাম না। হায়! এই অধঃপতনের দিনে যদি হিন্দুলিলনাকুল বুঝিতেন যে, তঁহাদের সদৃষ্টান্তে সহিষ্ণু ও ধৈৰ্য্যশালী কৃতী পুত্ৰ সকল গঠিত হইবে ; যদি তাহারা বুঝিতেন, যে তঁহাদের বিষম ঈর্ষা, হিংসা, বিদ্বেষ বীজ, বিকীর্ণ হইয়া হিন্দুগৃহ, হিন্দুসমাজ চূর্ণ বিচুর্ণ করিয়া দিতেছে, তাহাহইলে হিন্দুসমাজ আজি নূতন মূৰ্ত্তি ধারণ করিত। তঁহাদের অপক্ষপাতিতা ও নিঃস্বার্থভাব নাই বলিয়া, তঁহাদের গুরুজনে বিশ্বাস ও নির্ভর নাই বলিয়া, তাহদের সেই চিরন্তন, অপার, অপরিসীম প্রীতি ও সহানুভূতির দিন দিন অভাব হইতেছে দেখিয়া, তাহদের সস্তানগণও স্বার্থপর, আত্মপরায়ণ, অবিশ্বাসী, ভক্তিহীন ও অহঙ্কারী হইতেছে। এখন কি গৃহে, কি বাহিরে প্ৰতি কাৰ্য্যে, প্ৰতি অনুষ্ঠানে সমবেত হইয়া কেহ কাজ করিতে চাহেন না ; সকলেই প্ৰভু হইতে উন্মুখ। প্ৰত্যেকেই অন্য সকলের অপেক্ষা আপনাকে পণ্ডিত, জ্ঞানী ও বহুদৰ্শী মনে করেন। নিজের মনোমত কোন কাৰ্য্য না হইলেই, নিজের স্বার্থে ধিন্দুমাত্র আঘাত লাগিলেই, আর তঁহার সে অনুষ্ঠানে আস্থা থাকে না, এক নিমিষে অপরিমিত সহানুভূতি নির্বাপিত হুইয়া যায় ; কারণ প্ৰকৃত সহানুভূতি আমাদের হৃদয়ে এখন আর জন্মে না ; কৃত্রিম জিনিস এক মুহুর্তে প্ৰজ্বলিত, পরীক্ষণেই নিৰ্বাপিত হয়। আমাদের মন নিতান্ত সঙ্কীর্ণ, হৃদয় নিতান্ত ক্ষুদ্র হইয়াছে বলিয়া প্ৰতিবাদটুকুও আমরা সহ্য করিতে পারি না। আমরা যদি মাতার উদার প্রশস্ত হৃদয়ের দৃষ্টান্ত পাইতাম, তবে সেই উদারতাবলে, সেই মহত্বগুণে সকল বাদ প্ৰতিবাদ সহ করিতে পারিতাম ; ভাবিতাম না। এই প্ৰতিবাদেই আমি অজ্ঞানী, অপণ্ডিত ও অশ্ৰদ্ধেয় প্রতীয়মান হইব। এতটুকু বিশ্বাস নাই বলিয়া,-কিছুমাত্র আত্মনির্ভর নাই বলিয়া আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার, নিরপেক্ষ সমালোচনা সহিতে অক্ষম।