তাকে ঠিক সেইভাবেই কালের দরবারে হাজিব করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। 'সুকান্ত-সমগ্র’র সার্থকতা সেইখানেই।
ভাবতে অবাক লাগে, সুকান্ত বেঁচে থাকলে আজ তার একচল্লিশ বছর বযস হত। কেমন দেখতে হত সুকান্তকে? জীবনে কোন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে সে যেত? তার লেখার ধারা কোন্ পথে বাঁক নিত?
অসুখে পড়বার অল্প কিছুদিন আগে একদিন ওয়েলিংটন স্কোয়ারের এক মিটিঙে যাবার পথে আমার এক সংশযেব জবাবে সুকান্ত বলেছিল: আমার কবিতা পড়ে পাটিব কর্মীরা যদি খুশি হয় তাহলেই আমি খুশি—কেননা এই দলবলই তত বাড়তে বাড়তে একদিন এ দেশের অধিকাংশ হবে।
সেদিন তর্কে আমি ওকে হারাতে চেষ্টা করেছিলাম। আজ আমাকে মানতেই হবে, একদিক থেকে তার কথাটা মিথ্যে নয়। গত কুড়ি বছর ধরে সুকান্তব বই বাংলা দেশের প্রায় ঘরে ঘরে স্থান পেযেছে। পূর্ব পাকিস্তানে তার একটা ছাপা বই থেকে শ'য়ে শ'য়ে হাতে লিখে নকল করে লোকে সযত্নে ঘরে রেখেছে। তার পাঠককুল ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। সুকান্ত মুখে যাই বলুক, আসলে সে শুধু পার্টির কর্মীদের জন্যেই লেখে নি। যে নতুন শক্তি সমাজে সেদিন মাথা তুলেছিল, সুকান্ত তার বুকে সাহস, চোখে অন্তদৃষ্টি আর কণ্ঠে ভাষা জুগিয়েছিল। এ কথাও ঠিক নয়, কাউকে খুশি করার জন্যে সুকান্ত লিখেছিল। তাগিদটা বাইরে থেকে আসে নি, এসেছিল তার নিজের ভেতর থেকে। পাঠকের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আসলে নিজেকেই সে কবিতায় ঢেলে দিয়েছিল।
কী ভাবে বলেছিল সেটাও দেখতে হবে। সুকান্তর আগে আর কেউ ওকথা ওভাবে বলে নি ব'লেই পাঠকেরা কান খাড়া করে তার কথা শুনেছেন। বলবার উদ্দেশ্যটা যাঁদের মনের মত ছিল না, বলবার গুণে তাঁরাও না শুনে পারেন নি।
সুকান্তর মৃত্যুর পর শ্রীযুক্ত জগদীশ ভট্টাচার্য লিখেছিলেন: •••যে কবির বাণী শোনবার জন্যে কবিগুরু কান পেতেছিলেন সুকান্ত সেই কবি। শৌখিন মজদুরি নয়, কৃষাণের জীবনের সে ছিল সত্যকার শরিক, কর্মে ও কথায় তাদেরই সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা ছিল তার, মাটির রসে ঋদ্ধ ও পুষ্ট তার দেহমন। মাটির বুক থেকে সে উঠে এসেছিল।
••••ব্যক্তিজীবনে সুকান্ত একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিল।