পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সাফ করিলেও তাহার এই জীব-কংকাল সহজে নষ্ট হয় না—এগুলি এমনই মজবুত। ইহাদের আসল বাহার এই কংকালগুলিতেই। জীবন্ত অবস্থায় এই কংকালগুলি সবুজ কোষের মধ্যে ঢাকা থাকে। ইহাদের কারিকুরিগুলা তখন অণুবীক্ষণ দিয়াও চোখে পড়ে না।

 এ পর্যন্ত অন্তত দশহাজার রকমের ডায়াটম্ পাওয়া গিয়াছে। ছবিকে যত বড়ো করিবে তাহার গায়ের কারিকুরির মধ্যে ততই আরো আশ্চর্য সূক্ষ কাজ দেখা যাইবে।

 জীবন্ত অবস্থায় এই ডায়াটম্গুলির মধ্যে আরেকটি অদ্ভুত ব্যবস্থা দেখা যায় এই যে হাত-পা কিছুই নাই, অথচ তাহারা চলিয়া বেড়ায়। জলের মধ্যে এমন সুন্দর সহজভাবে তাহারা ঘুরিয়া চলে যে দেখিলে আশ্চর্য লাগে। কি করিয়া যে তাহারা চলে, তাহার.কারণ ঠিক করিতে গিয়া বড়ো-বড়ো পণ্ডিতদের অবধি মাথা ঘুরিয়া গিয়াছে।

সন্দেশ-ভাদ্র, ১০২৪


আকাশ আলেয়া

 মানুষের বুদ্ধিতে আজ পর্যন্ত কত অসংখ্যরকমের আলোর সৃষ্টি হয়েছে। সেই কাঠে ঘষা আগুন থেকে শুরু করে অজিকালকার বিদ্যুতের আলো পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তার নাম করতে গেলেও প্রকাণ্ড তালিকা হয়ে পড়ে। সেই কতরকমের তেলের প্রদীপ, কত শত চর্বি-বাতি, মোমের বাতি, কত অসংখ্য গ্যাসের আলো, বিদ্যুতের আলো, তার ঠাণ্ডা আলো হিসাব রাখে কে। মানুষের তৈরি জিনিসে কাজ চলে ভালো, তাতে আর সন্দেহ নাই। রোদের আলো আর চাঁদের আলো আর প্রকৃতির নানা খেয়ালের নানারকমের আলো, কেবল এই নিয়ে আজকালকার নিতান্ত অসভ্য মানুষের জীবন চলে না। কিন্তু তবু বলতে হয় যে, এই প্রকৃতির রাজ্যে আমরা যতরকমের আলো দেখি, মানুষের তৈরি এই-সব আলো তারই অতি সামান্য নকল মাত্র। সূর্যের কথা ছেড়েই দিলাম, আকাশের মেঘে যে বিদ্যুতের আলো চমকায় তার সঙ্গে মানুষের কোন ইলেকট্রিক লাইটের তুলনা হয়? সামান্য জোনাকি পোকার গায়ে যে আলো জ্বলে যাতে গরম হয় না অথচ আলো হয়, মানুষ তার নকলে ঠাণ্ডা আলো জ্বালাবার জন্য কত চেষ্টা করেছে কিন্তু আজ পর্যন্ত পেরে ওঠে নি। সুর্যগ্রহণের সময় সূর্যের কিরণ-মুকুট হতে যে অদ্ভুত আলো বেরোয়, তার গম্ভীর শোভায় পশুপাখি পর্যন্ত ভয়ে স্তম্ভিত হয়ে যায়। মানুষের মাথায় সেরকম আলোর কল্পনাও আসে না।

 কিন্তু এই পৃথিবীতে সবচাইতে অদ্ভুত আর সবচাইতে সুন্দর যে আলো সে হচ্ছে মেরুদেশের ‘আকাশ আলেয়া’ বা ‘মেরুজ্যোতি'। তাকে দেখতে হলে উত্তরে কিংবা দক্ষিণে মেরুর প্রদেশে যেতে হয়। সেখানে শীতকালের রাত্রে মেরুর চারিদিকে কয়েকশত মাইল দূর পর্যন্ত আলোর অতি চমৎকার খেলা চলতে থাকে। শুধু এই আলো দেখবার জন্যই প্রতি বৎসর কত দূরদেশের কত শত যাত্রী নরওয়ের উত্তরে দুরন্ত শীতের মধ্যে বেড়াতে যায়।

নানা নিবন্ধ
১৯৪