পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভবদুলাল। ও, ভুল হয়েছে বুঝি ? তা আমার আবার মাথার ব্যারাম আছে কিনা । সেই সেবার সজারুতে কামড়েছিল – ঈশাণ । কি মশায়, সেদিন বললেন, বেড়াল, আর আজ বলছেন সজারু ! ভবদুলাল । ও, তাই নাকি ? বেড়াল বলেছিলাম নাকি ? তা হবে । তা, ও বেড়ালও যা সজারুও তাই ! ও কেবল দেখবার রকমারি কিনা । আসলে বস্তু তো তার স্বতন্ত্র নয়। কারণ কেন্দ্রগতং নির্বিশেষম। কি বলেন ? ওটাও দিয়ে দিই,কেমন? সত্যবাহন। দেখুন, যে বিষয়ে আপনার বুঝবার ক্ষমতা হয় নি সে-বিষয়ে এরকম যা-তা যদি লেখেন তবে আপনার সঙ্গে আমার জন্মের মতন ছাড়াছাড়ি । ভবদুলাল। কি মুশকিল ৷ শ্ৰীখণ্ডবাবুও ঠিক ঐরকম বললেন । ওদেরই কতকগুলো ভালো ভালো কথা সেদিন আমি ছেলেদের কাছে বলছিলাম , এমন সময় উনি রেগে—“ও-সব কি শেখাচ্ছেন বলে একেবারে তেইশখানা পাতা ছিড়ে দিলেন । তাই তো চলে এলাম । ঈশান । একি মশায় ? খাতায় এ-সব কি লিখেছেন ? ভবদুলাল । কেন, কি হয়েছে বলুন দেখি ? ইশান । কি হয়েছে ? এই আপনার চলচ্চিত্তচঞ্চরি ? এসব কি ? ঈশানবাবুর ছায়া ঘুরছে—লাটাই পাকাচ্ছে—আর ঈশনবাবু গোৎ খাচ্ছেন। পেটের ভিতর বিরাট অন্ধকার হা করে কামড়ে দিয়েছে—চ্যাচাতে পারছেন না, খালি নিশ্বাস উঠছে আর পড়ছে—সব ঝাপসা দেখছে-- গা ঝিম-ঝিম– নাক্স ভমিকা থাটি – ভবদুলাল । বাঃ ! ও ওগুলো তো আপনাদেরই কথা । শুধু নাক্স ভমিকাটা আমার লেখা— ঘোর উত্তেজনা সকলে। দিন দেখি খাতাখানা । ভবদুলাল। আঃ— আমার চলচ্চিত্তচঞ্চরি-- সত্যবাহন । ধেৎ তেরি চলচ্চিত্তচঞ্চরি— ভবদুলাল। ওকি মশায়—টানাটানি করেন কেন ? একে তো শ্ৰীখণ্ডবাবু তেইশখানা পাতা ছিড়ে দিয়েছেন –হাঁ, হা, হা করেন কি, করেন কি ? দেখুন দেখি মশায়, আমার চলচ্চিত্তচঞ্চরি ছিঁড়ে দিলে । ছেড়া খাতা সংগ্রহের চেষ্টা সত্যবাহন। এই ঈশেনবাবুর যত বাড়াবাড়ি । আপনার ও-সব গান আর সমীক্ষা ওকে শোনাবার কি দরকার ছিল ? ঈশান । আপনি আবার আহ্লাদ করে ওর কাছে খণ্ডাখণ্ডের ব্যাখ্যা করতে গেলেন কেন ? ভবদুলাল । খাতা ছিড়ে দিয়েছেন তা কি হয়েছে। আবার লিখব, ... বাধানো । তার উপরে বড়-বড় করে সোনার জলে লেখা— চলচ্চিত্তচঞ্চরি—পাবলিশড বাই ভবদুলাল। একুশ টাকা দাম করব । তখন দেখব—আপনাদের ঐ সাম্যঘণ্ট আর সিদ্ধান্ত বিসূচিকা কোথায় লাগে। গান সংসার কটাহ তলে জ্বলে রে জ্বলে । জ্বলে মহাকালানল জ্বলে জুল ভুল, সজল কাজল তুলে রে জ্বলে । অলক তিলক জুলে ললাটে, সোনালী লিখন জ্বলে মলাটে, খেলে কাচাকচু জুলে চুলকানি তুলে রে জুলে । ভাবুক সভা ৷ [ ভাবুকদাদা নিদ্রাবিচট—ছোকরা ভাবুকদলের প্রবেশ ] প্রথম ভাবুক : ইকি ভাই লম্বকেশ, দেখছ নাকি ব্যাপারটা ? ভাবুকদাদা মূৰ্ছাগত, মাথায় গুজে র্যাপারটা । দ্বিতীয় ভাবুক। তাই তো বটে। আমি বলি এত কি হয় সহ্য ? সকাল বিকাল এমন ধারা ভাবের আতিশয্য । অবাক করলে ! ঠিক যেমন শাস্ত্রে আছে উক্ত— ভাবের ঝোকে একেবারে বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত । সাংঘাতিক এ ভাবের খেলা বুঝতে নারে মূখভাবরাজ্যের তত্ত্ব রে ভাই সূক্ষ্মাদপি সূক্ষ । দ্বিতীয় ভাবুক। ভাবটা যখন গাঢ় হয়—বলে গেছেন ভক্ত, হাদয়টাকে এটে ধরে আঠার মতো শক্ত । (যখন) ভাবের বেগে জোয়ার লেগে বন্যা আসে তেড়ে, আত্মারাপ সূক্ষ শরীর পালায় দেহ ছেড়ে— (কিন্তু) হেথায় যেমন গতিক দেখছি শঙ্কা হচ্ছে খুবই আত্মা পুরুষ গেছেন হয়তো ভাবের স্রোতে ডুবি । যেমন ধারা পড়ছে দেখ গুরু-গুরু নিশ্বাস, বেশিক্ষণ বাঁচবে এমন কোরো নাকো বিশ্বাস । কোনখানে হায় ছিড়ে গেছে সূক্ষ কোনো স্নায়ু ক্ষণজন্মা পুরুষ কিনা, তাইতে অল্প আয়ু । প্রথম ভাবুক । প্রথম ভাবুক । বিলাপ সঙ্গীত ভবনদী পার হবি কে চড়ে ভবের নায় ? ভাবের ভাবনা ভাবতে,ভাবতে ভবের পারে যায় রে সুকুমার সমগ্র রচনাবলী ; ও