পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
হারানাে খাতা।

 নিরঞ্জনের প্রতি লোমকূপটী পর্য্যন্ত খাড়া হইয়া উঠিল। নিঃসঙ্গ অবোধ শিশু যেমন ভূতের ভয়ে অন্ধকার হইতে আলোর দিকে ছুটিয়া যায়, তেম্‌নি করিয়া নিজের সঙ্গকে সে একান্ত ভয়ে অসহ্য বোধ করিয়া যেন নিজের কাছ হইতে পালাইতে চাহিয়াই ধড়মড় করিয়া উঠিয়া পড়িল। ছুটিতে আরম্ভ করিত, হঠাৎ তাহার কানে যেন দৈববাণীর মতই কোথা হইতে সেই বিজন নদীপুলিনে এক মানবকণ্ঠের সুর লহরী ভাসিয়া আসিয়া ঠেকিল। আকুল হইয়া কান খাড়া করিতেই বোঝা গেল, সে একটা গান এবং নদীতীরেই, তাহার নিকট হইতে সামান্য একটুখানি দুরে থাকিয়াই কেহ সে গান গাহিতেছে। বংশীরবাকৃষ্ট সর্পের মতই সে সেই শব্দ লক্ষ্যে সেই দিকে অগ্রসর হইল।

 গঙ্গায় তখন জোয়ার আসিয়াছে, শব্দ হইতেছিল কল কল কল। জল কিনারায় অনেক দূর অবধি উঠিয়া আসিয়াছে, স্রোতের মুখে দুরগামী পণ্যবাহী কয়েকখানি নৌকা ভাসাইয়া দেওয়া হইয়াছে, তাদের দাঁড়ের শব্দ শোনা গেল ছপাৎছপ্। নিরঞ্জনের ভয়ার্ত্ত বক্ষ চিরিয়া চিরিয়া একটা আশ্বাসের আর্ত্তশ্বাস উঠিয়া পড়িল।

 গান গাহিতেছিল একজন স্ত্রীলোক এবং ওই বিদ্যায় কোন অভিজ্ঞতা না থাকিলেও নিরঞ্জন স্পষ্টই বুঝিল এ শাস্ত্রে ইহার যথেষ্ট দখল আছে। সে গানটা এই—

“যে জানে আনন্দময়ী! তোমাকে।
ও সে কি অন্তরে কি বাহিরে আনন্দময় সব দেখে।
যারা দুঃখে হয় ব্যাকুল, ভাবে বিপদের নাই কুল,—
তারা জানে না বে গাছে কেবল ফুটিতেছে ফুল;—
সংসার নিরানন্দের ফুল—
শেষে আনন্দময় ফল পাকে।”—