পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
হারানাে খাতা।

বিবাহিত ও নূতনের আস্বাদপ্রাপ্ত নরেশ সুষমাকে পুরাতন ও জীর্ণ বস্ত্রের ন্যায় ফেলিয়া দিতেই ইচ্ছুক হইয়াছেন। প্রবল অনুকম্পা পরবশ হইয়া সে তৎক্ষণাৎ বলিয়া বসিল—”কিচ্ছু ভাবনা নেই, আমি তার জন্য ভাল দেখে কাজ ঠিক করে দেবো। গান শেখাবার কাজের আবার ভাবনা। লোকে একটা শেখাবার লোক পায় না।”

 নরেশ বিশ্বপ্রিয়কে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলিয়া চিনিত। সে নিশ্চিন্ত হইয়া বাড়ী গেল এবং সুষমাকে লিখিল, স্কুলে সুবিধা নয়, তবে ভদ্র গৃহস্থ ঘরে কাজের জোগাড় শীঘ্র হইবারই সম্ভাবনা আছে। সংবাদ পাইলেই জানাইব।

 শীঘ্রই সংবাদ পাওয়া গেল এবং বিশেষ ভাবে অন্তরের সঙ্গে সায় দিতে না পারিলেও অগত্যা এক রকমে মনস্তুষ্টি করিয়া লইয়া নরেশ সুষমাকেও সেই খবর তৎক্ষণাৎ পাঠাইয়া দিলেন। সে চিঠি পাঠাইতে তাঁহার কণ্ঠভেদ করিয়া একটা দীর্ঘনিশ্বাস উত্থিত ও পতিত হইল।

 কিন্তু সুষমার ইহাতে যেন আনন্দের আর অবধি রহিল না। কাঙ্গালে যেন কি নিধি কুড়াইয়া পাইয়াছে, এমন করিয়াই সে নেহাৎ সাত বছরের মেয়ের মতন আহ্লাদে প্রায় নাচিয়াই উঠিয়াছিল। এক বিলাতফেরৎ পরিবারে তাহাকে দু’ তিন ঘণ্টার জন্য দু’ এক রকম বাজনা শিক্ষা দিতে হইবে। বাড়ীতে কেবল স্বামী স্ত্রী। স্ত্রীটী উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কোন ধনাঢ্য ও নব্য তন্ত্রের ছেত্রী কন্যা, স্বামীটী বাঙ্গালী।

 সুষমা উঠি পড়ি করিয়া রান্না খাওয়া সারিল, বরাবর সে নিজেই রাঁধিয়া খায়। নরেশ প্রথমাবধি ইচ্ছাপূর্ব্বকই এই ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। যাহাতে বিলাসিনীর গর্ভ প্রসূত সুষমা বিলাস সুখকে তুচ্ছ বোধ করিতে শেখে সেই শিক্ষাই তিনি তাহার জন্য সর্ব্ব প্রযত্নে স্থির করিয়া দিয়াছিলেন। সুষমারও তাহাতে আনন্দ ভিন্ন বিরক্তিবোধ ছিল না।