পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একবিংশ পরিচ্ছেদ

মোরে পুষ্প দিলে বলে পুড়িছে অন্তরে
পুড়িয়া মরুক পুষ্প দিব কেন তারে?

—মহাভারত।

 পরিমল মুক্তার মালা জড়ান খোঁপার উপর একটি পাতাশুদ্ধ সাদা গোলাপ পরিয়াছে, গায়ে তার পাতলা গোলাপী বেনারসীর হাতখোলা জ্যাকেট, তাহাও বোম্বাই মুক্তায় খচিত এবং মুক্তার ঝালরগুলি তার নব কিসলয়চিক্কণ স্বাস্থ্যের সৌন্দর্য্যে ভরা মসৃণ বাহুর উপর অতি সুন্দরভাবে দোল খাইতেছিল। কানের হীরা কয়খানা সন্ধ্যা শুকতারার মতন উজ্জ্বল এবং গলায় একাবলী মুক্তার হার তেমনি স্থূল ও সুগোল। গোলাপ ঝাড়ের বুটাকাটা সন্ধ্যাকাশের মতই সমুজ্জ্বল গোলাপী আভাযুক্ত সাড়ীর আঁচল হালফ্যাসানে হীরার পিনবদ্ধ, হাতে একখানা পালকের পাখা,—এইরকম সাজগোজ করিয়া সে সান্ধ্য আকাশের শোভা দেখিতে ছাদে উঠিয়াছিল,—অন্নদা আসিয়া জানাইল রাজাবাবু ডাকিতেছেন। পরিমলের মন যেন আনন্দে নৃত্য করিয়া উঠিল। সকল ভূষা তখনই সার্থক হয়, যখন এই সাজান দেহ তার যথার্থ আদরের পাত্রের আদরের স্পর্শ ও প্রশংসার দৃষ্টি লাভ করে।

 “কি গো! কি ভাগ্যি আজ যে এমন অসময়ে গরীবের গরীবখানায় রাজামশাইএর পায়ের ধূলো পড়লো? বলি কোনদিকের সূর্য্যি আজ কোন্‌দিক দিয়ে অস্ত গেলেন?”—বলিতে বলিতে সেই মুহূর্ত্তেই তাহারই দিকে উদ্বিগ্নমুখে অগ্রসর স্বামীর মুখ সে দেখিতে পাইল; এবং তাঁহার আনন্দোত্তেজনা ও সুখাবেগে স্পন্দিত হৃদয় যেন অকস্মাৎ স্রোতোহত হইয়া থমকিয়া গেল। উদ্যত অধরের সরস হাস্য এবং ব্যগ্র বাহুর সাগ্রহ