পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ

সূর্য যদি না বর্জ্জন করে তােরে,
আমিও তােমায় করিব না বর্জ্জন।

—তীর্থরেণু।

 সেদিন নরেশ যখন চলিয়া গেলেন, পরিমলের বােধ হইল স্বামীকে যেন সে সুদূর কালের মতই হারাইয়া ফেলিয়াছে, হয়ত বা চিরকালের জন্যই তাহাদের এই ছাড়াছাড়ি হইয়া গেল, অতঃপর কোন দিনই তাঁহাকে সে আর নিজের কাছে ফিরিয়া পাইবে না। সে নিজের স্বর্ণসূত্র খচিত গােলাপী আঁচল মুখে চাপিয়া ব্যথায় আকুল আচ্ছন্ন হইয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাঁদিতে লাগিল। কান্নার উচ্ছ্বাসে কম্পিত হইয়া বিদীর্ণ প্রায় অন্তরের মধ্য হইতে তাহার অভিমানপুষ্ট অভিযােগ উঠিয়া আসিল। কান্নায় অধীর হইয়া সে মনে মনে স্বামীকে উদ্দেশ করিয়া বলিতে লাগিল, “দুঃখীর চেয়েও দুঃখী আমি, সে তো তুমি জেনে শুনেই আমায় নিয়ে এসেছ! কিন্তু ভালবাসায় যে একসময়ে আমি আজকের রাজরাণীর চেয়েও ঢের বেশী বড় ছিলুম, সে তো তুমি দেখতে পাওনি। তাই ভেবেছ কতকগুলাে সােনাদানা চাপিয়ে দিলেই গরীবের মেয়ের বুঝি বুক ভরিয়ে দেওয়া যায়, না? আমার মতন ক’জন বাপের ভালবাসা পায়? আমার কি স্নেহ ভরা মস্ত লােক ভাই-ই ছিল! আমার মা;—আর তিনি? তাঁর কাছেই কি আমি কম পেয়েছিলুম? দাদার বন্ধু কিন্তু দাদার চাইতেও যেন তাঁর যত্ন আরও বেশীই ছিল। তাঁর মায়ের কথা মনে হলে যে এখনও আমি কান্না চাপতে পারিনি। আমায় তুমি গরীব বলে,