পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানো খাতা।
৭৩

তার সঙ্গে কার কতটুকু মিল কোথায় খুঁজলে পাওয়া যায়, সেই ভাবনায় মাথা ঘামিয়ে লাভ? মনকে সে কড়া হুকুমে ঠাণ্ডা করিতে চাহিল। সেদিন পড়িতে গিয়াই সে বই খুলিবার আগে ভাগেই মুখ খুলিয়া এবং মুখ তুলিয়া নিরঞ্জনের বিদগ্ধ ও বিব্রত মুখের দিকে করুণচোখে চাহিয়া দেখিল। দেখিতে দেখিতে তাহার মনের ভিতরটা যেন করুণায় ও বেদনায় নিবিড়ভাবে ভরিয়া আসিল, তখন সে গভীর সহানুভূতি ও ব্যথায় বিজড়িত চিত্তে তাহার সহিত আলাপ করিতে বসিল। নিরঞ্জন নতমুখে তাহার পাঠ প্রতীক্ষা করিতেছিল। ম্যাকমিলানের ছাপা স্কুল পাঠ্য বইএর মাপজোকা রচনার পরিবর্ত্তে তাহার কানে আসিয়া সবিস্ময়ে এই প্রশ্নটা প্রবেশ করিল—

 “আচ্ছা মাষ্টার মশাই! আপনার দেশ কোনখানে ছিল?”—

 নিরঞ্জন প্রথমে চমকিয়া উঠিল; তারপর হাতের আঙ্গুল দিয়া নিজের কপাল টিপিয়া ধরিল; আরও খানিক পরে সে মুখ না তুলিয়াই জবাব দিল, “বসিরহাট”।

 “বসিরহাট! তবেতো ঠাকুরঝিদের দেশেরই লোক আপনি! হারাণ চন্দ্র ঘোষেদের জানেন? নাম শুনেছেন অবশ্য? সেই হারাণঘোষের মেজে-ছেলেই আমার নন্দাই। তার নাম জ্যোতিঃ প্রসাদ ঘোষ। সে গেল বছর ওকালতি পাশ করে উকিল হয়েছে। জানেন তাকে? বড্ড ভাল ছেলে সে। নেহাৎ ভালমানুষ, যেন গো-বেচারী একেবারে!—”

 পরিমলের মনের মধ্যে বোধ করি মানুষের পরিচয়ে তাহার গো-জন্মের আভাসটা একটু বেশী পরিমাণে সুব্যক্ত হওয়াটাকেই তাহার পক্ষে গৌরবজনক বলিয়া বোধ ছিল, সেই জন্যই সে সুষোগ পাওয়া মাত্রে তাহার এই নিরীহ প্রকৃতির নন্দাইটীর প্রশংসা উচ্ছ্বসিতকণ্ঠে