পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—মহর্ষির জীবনী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ। ১৮০১ বিষয়ের প্রলোভন আর নাই, কিন্তু ঈশ্বরের ভাবও কিছুই পাইতেছি না, পার্থিব ও স্বৰ্গীয় সকল প্রকার মুখেরই অভাব। জীবন নীরস, পৃথিবী শ্মশানতুল্য। কিছুতেই সুখ নাই, কিছুতেই শান্তি নাই। দুই প্রহরের হুর্য্যের কিরণ-রেখা সকল যেন কৃষ্ণবর্ণ বোধ হইত। সেই সময় আমার মুখ দিয়া সহসা এই গানটী বাহির হইল,—“হবে, কি হবে দিবাআলোকে, জ্ঞান বিনা সব অন্ধকার।” এই আমার প্রথম গান। আমি সেই সমাধি-স্তম্ভে বসিয়া একাকী এই গানটা মুক্তকণ্ঠে গাইতাম। তখন সংস্কৃত শিখিতে আমার বড় ইচ্ছা হইল। সংস্কৃতভাষার উপর আমার বালককালাবধিই অনুরাগ ছিল। চাণক্যের শ্লোক যত্বপূৰ্ব্বক তখন মুখস্থ করিতাম। কোন একটা ভাল শ্লোক শুনিলে অমনি তাহা শিখিয়া সংস্কৃত শিক্ষা। লইতাম। তখন আমাদের বাটীতে একজন সভা-পণ্ডিত ছিলেন। তাহার নাম কমলাকান্ত চূড়ামণি, নিবাস বঁাশবেড়ে। তিনি অগ্ৰে গোপীমোহন ঠাকুরের আশ্রয়ে ছিলেন। পরে আমাদের হন। তিনি স্থপণ্ডিত ও তেজস্বী। আমার বয়স তখন অল্প, তিনি আমাকে বড় ভালবাসিতেন। আমি তাহাকে ভক্তি করিতাম। একদিন বলিলাম, আমি আপনার নিকট মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ পড়িব । তিনি কহিলেন, ভালইত আমি তোমাকে পড়াইব। তখন চূড়ামণির নিকট মুগ্ধবোধ আরম্ভ করিলাম এবং ঝ ঢ় ধ ঘ ভ, জ ড় দ গ ব, মুখস্থ করিতে লাগিলাম। সংস্কৃতভাষায় প্রবিষ্ট হইবার জন্ত চূড়ামণির নিকট মুগ্ধবোধ পড়িবার আমার প্রথম উৎসাহ । একদিন চূড়ামণি তাহার হাতের লেখা একখানি কাগজ আস্তে আস্তে বাহির করিয়া আমার হাতে দিলেন, কহিলেন, এই লেখাতে সহী করিয়া দেও। আমি বলিলাম কি লেখা ? পড়িয়া দেখ। তাহাতে লেখা আছে যে, তাহার পুত্ৰ শু্যামাচরণকে চিরকাল আমায় প্রতিপালন করিতে হইবে। আমি তাহাতে তখনি সহী করিয়া দিলাম। চূড়ামণির প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ছিল, তিনি বলিলেন আর আমি অমনি তাহাতে সহী করিয়া দিলাম। তাহার বিষয় আমি তখন কিছুই প্রণিধান করিলাম না। কিছুদিন পরে আমাদের সভাপণ্ডিত চূড়ামণির মৃত্যু হইল। তখন তামাচরণ আমার সেই স্বাক্ষরটুকু লইয়া আমার নিকট আসিলেন, .. কহিলেন যে, “আমার পিতার মৃত্যু হইয়াছে, আমি নিরাশ্রয়, এখন আপনার গ্রহণ। আমাকে প্রতিপালন করিতে হইবে। এই দেখুন আপনি পূৰ্ব্বেই ইহা লিথিয়া দিয়াছেন।” আমি তাহ অঙ্গীকার করিয়া লইলাম এবং তদবধি হামাচরণ আমার নিকটে থাকিতেন। সংস্কৃতভাষায় তাহার কিছু অধিকার ছিল। আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, ঈশ্বরের তত্ত্বকথা কিসে পাওয়া যায় ? তিনি কহিলেন, মহাভারতে। তখন আমি তাহার ২২ ৬