পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা ২২১ সব দিন আবার সেখানেও পাওয়া যায় না । রাজলক্ষী ওদের কথা শুনে দেথতে এসেছিল। সে-ই চা ও খাবার পরিবেশন করেছিল প্রভাস ও তার বন্ধকে । 曝 আর একটা কথা শরৎ বলে নি বাবাকে । প্রভাস ওকে একটা মখমলের বাক্স দিয়ে গিয়েছে। কেমন চমৎকার বাক্সটা । তার মধ্যে গন্ধতেল, এসেন্স, পাউডার আরও সব কি কি ! না নিলে প্রভাসদা কি মনে করবে, সে বাক্সটা হাত পেতে নিয়েছিল—কলকাতার ছেলে, ওরা হয়তো বোঝে না যে বিধবা মানুষের ওসব ব্যবহার করতে নেই । তার যে কোনো বিষয়ে কোনো সাধ-আহমাদ নেই, সব বিষয়ে সে নিপহ, উদাসী—কেমন এক ধরণের। এ বয়সেই মেয়ের সন্ন্যাসিনী মাত্তি –তার বাবার ভাল লাগে না । শরৎ তা জানে। বাবাকে বলে কি হবে বাক্সটার কথা, যখন সেটা সে রাখবে না। কেদার আহারান্তে তামাক খেতে বসলেন বাইরের দাওয়ায় । শরৎ বলল, বাইরে কেন বাবা, ঘরে বসে খাও না তামাক, আজকাল রাত্তিরে বেশ ঠাণডা পড়ে। দিনে গরম রাতে ঠাণডা যত অসখের কুটি । গভীর রাত্রি । - বিছানায় শয়ে একটা কথা তার মনে হল বার বার । এর আগেও অনেক বার মনে হয়েছে। প্রভাস-দার বন্ধ অর্ণবাবর চেহারা বেশ সন্দর, অবস্থাও ভাল । রাজলক্ষীর সঙ্গে ওর বিয়ে দেওয়া যেত । রাজলক্ষী এল তিনদিন পরে। ● সে গড়ের-বনে সজনে ফুল কুড়তে এসেছিল, কোঁচড় ভত্তি করে ফুল কুড়িয়ে বাড়ি ফিরবার পথে শরতের রান্নাঘরে উকি মেরে বললে, ও শরৎদি, সজনে ফুল রাখবে নাকি ? কত ফুল কুড়িয়েছি দ্যাথো—তোমাদের ওই পুকুরের কোণের গাছে । শরৎ রান্না চড়িয়েছিল, ব্যস্তভাবে খুশির সরে বললে, ও রাজলক্ষী আয় আয়, দেখি কেমন ফুল ? আয় তোকে আমি খুজছি ক’iদন । কথা আছে তোর সঙ্গে । একটা ছোট চুবড়ি এনে বললে, দে এতে চাট্টি ফুল । বেশ কড়ি কড়ি ফুলগালো, ভাজবো এখন। বাবা বন্ড খেতে ভালবাসেন । —শরৎদি, আমাদের ওদিকে তুমিও তো যাও নি ক'দিন ? —না ভাই, বাবার পায়ে বাত মত হয়ে ক'দিন কস্ট পেলেন। তাঁর তাপসে ক— আবার এদিকে সংসারের ছিটি কাজ, এর পরে সময় পাই কখন যে যাবো বল । চা খাবি ? 确 —না শরৎদি, বেলা হয়ে গেল—আর বেশীক্ষণ থাকলে এবেলা ফুলগুলো ভাজা হবে কখন ? এ বেলা যাই—ও বেলা বরং আসবো । —দাঁড়া, তোর জন্যে একটা জিনিস রেখে দিয়েছি, নিয়ে যা— শরৎ মখমলের বাক্সটা এনে ওর হাতে দিয়ে বললে, দ্যাখ তো কেমন ? খালে দ্যাখ অপ্রত্যাশিত আনন্দে ও বিস্ময়ে রাজলক্ষীর মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো এক মহত্তে । বাক্সটা খলতে খলতে বললে, কোথায় পেলে শরৎদি ? —প্রভাসদা দিয়ে গিয়েছিল সেদিন । রাজলক্ষী শরতের মুখের দিকে চেয়ে বললে, তা তুমি রাখলে না ? শরৎ মদন হেসে বললে, ওর মধ্যে দ্যাখ না কত কি-সাবান, পাউডার, মুখে মাখবার ক্লিম-আমি কি করবো ও সব । তুই নিয়ে গিয়ে রাখলে আমার আনন্দ হবে।