পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ৩৩২ গল্প-গ্রন্থাবলী “তুমি রাজা হইবে শুনিয়া সকলেই পলকিত। সকলেই বলিতেছে—আহা, আমাদের বগ-গত বাদশাহ পরম দয়াবান ধামিক প্রজাবৎসল নাপতি ছিলেন। তাঁহার পত্র রাজসিংহাসন পাইলে আবার রাজ্যের সেইরাপ সুখ সম্পদ হইবে। এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া তোমার পিতৃব্য রোষে ও হিংসায় জবলিয়া উঠিয়াছেন। আমাকে ডাকাইয়া বলিলেন, মবোরক, তুমি যদি কোনও মতে যবেরাজকে মারিয়া ফেলিতে পার তাহা হইলে আমি তোমাকে এক লক্ষ বর্ণমাদ্রা দিব ।’ শনিয়া আমার মস্তকে বজ্রাঘিাত হইল। কিন্তু মনোভাব প্রকাশ করিলে সম হ বিপদ, সেই কারণে কপটতাপবেক বললাম—বাদশাহ, ইহা আর শক্ত কথা কি—আমি অনায়াসেই আপনার অভীপ্ট সিদ্ধ করিয়া দিব। তবে উপায় স্থির করিতে কিছু সময় লাগিবে।’ বাদশাহ শুনিয়া সন্তুষ্ট হইয়া আমাকে বিদায় मिझाzझन ।” এই পৰ্যন্ত শুনিয়া যবেরাজ অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া মবোরকের পদে লুণ্ঠিত হইয়া বলিতে লাগিলেন—“মবারক দাদা, কিরাপে আমার প্রাণ বাঁচিবে ?” মবোরক বলিল—“ভয় কি, ঈশ্বর আছেন। আমি কোনও উপায় করিব। তুমি কাতর হইও না ।” নানাপ্রকারে যবেরাজকে সাম্বনা দিয়া মবোরক কহিল—“আমার সহিত এস, তোমাকে একটি গুপ্ত বিষয় দেখাইব।” বিস্মিত হইয়া রাজপত্রে মুবারকের সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। যেখানে স্বগীয় বাদশাহ সব্বদা উপবেশন করিতেন, সে মহাল এখন লন্ধ ছিল। সেই মহালে উপস্থিত হইয়া, মবোরক ভিতরে প্রবেশ করিল। সবগীয় বাদশাহ যে কুশাঁখানিতে উপবেশন করিতেন, -সেই রত্নাসনখানিকে মবোরক বহন সম্মানে সেলাম করিল। তৎপরে, সেই কুশীর দক্ষিণ দিকে মেঝের একটি তত্ত্বা ধরিয়া টান দিল । টান দিবামাত্র সেখানি সরিয়া গেল এবং নিনে ভূগভে সোপানাবলী নামিয়া গিয়াছে দেখা গেল। যবেরাজ দেখিয়া বিস্মিত হইয়া কহিলেন—“এ কি মবোরক ?” মবোরক বলিল—“ইহা তোমার পিতার গুপ্ত গহ । আমার সঙ্গে নামিয়া আইস।" বলিয়া মবোরক সিড়ি দিয়া নামিতে লাগিল, যবেবাজও পশ্চাৎ পশ্চাৎ নামিলেন। ভিতরে গিয়া রাজপত্র দেখিলেন, চারিদিকে চারিটি কামরা আছে। প্রত্যেক কামরায় দশটি করিষা কলসী, সোণার শিকলে বাঁধা, কড়িকাঠ হইতে ঝুলিতেছে। প্রত্যেক কলসীর মখে একখানি করিয়া সোণার ইট রাখা আছে। উনচল্লিশটি কলসীতে, সোণার ইটের উপর একটি করিয়া কৃষ্ণপ্রস্তর নিমিত বানরমাত্তি বসানো আছে, কেবল একটিতে নাই। যে কলসীতে বানর নাই, তাহার মুখ খলিয়া শাহজাদা দেখিলেন, সেটি মোহরে পরিপর্ণে। অন্য কলসীগুলি শান্য। এই সমস্ত দেখিযা যবেরাজ বিস্ময়ে মবোরককে জিজ্ঞাসা জিজ্ঞাসা করিলেন—“দাদা এ সব কি ?” মবোরক বলিল—“জিনিদৈত্যগণের রাজা মালেক সাদেক তোমার পিতার একজন পরম বন্ধ ছিলেন। প্রতি বৎসর একদিন করিয়া তিনি তোমার পিতার সহিত আমোদ প্রমোদ করিতে আসিতেন। এই ভূগভর্ণস্থত কক্ষগুলিতে তাঁহারা আমোদ প্রমোদ করিতেন। ৰাইবার সময় তোমার পিতা, মালেক সাদেককে এক কলসী মোহর উপহার দিতেন, মালেক সাদেক তোমার পিতাকে একটি করিয়া ভৌতিক প্রস্তর নিমিত বানর দিয়া যাইতেন । এই বানরের আশ্চৰ্য্য গণ এই যে, যদি কোনও ব্যক্তি এইরুপ চল্লিশটি বানর পায়, তবে পৃথিবীতে আর তাহার কিছুই অসাধ্য থাকে না। উনচল্লিশ বৎসর মালেক সাদেক যাতায়াত করিয়াছিলেন,—এই উনচল্লিশ ঘড়া মোহর তাঁহাকে উপহার দেওয়া হইয়াছিল। তিনিও উনচল্লিশটি বানর দিয়াছেন। পর বৎসর আসিলে তহিকে দিবার জন্য এক ঘড়া মোহর এইখানে রাখা আছে। ইতিমধ্যে তোমার পিতার মৃত্যু হইল। নাহলে