পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OeAO গল্প-গ্রন্থাবলী রাজকুমার এ কথা শুনিয়া আবার পাগলের ভাণ আরম্ভ করলেন। দিল-আরামও দঃখিত মনে কাঁদিতে কাঁদিতে সে স্থান হইতে প্রস্থান করিল। পরদিন যখন দিল-আরাম রাজকুমারের নিকট আসিতেছিল তখন দেখিল, মেহেরঙ্গেজের দাসী রাজকুমারকে সঙ্গে করিয়া মেহেরগেজের মহালের অভিমুখে লইয়া যাইতেছে। তাহা দেখিয়া দিল-আরামের মনে ঈষা ও সন্দেহ উপস্থিত হইল। সে চপে চাপে পশ্চাৎ পশ্চাৎ গিয়া, মহালের এক কক্ষে লুকাইয়া মেহেরগেজ ও রাজকুমারের কথাবাত্তা গোপনে শনিতে লাগিল। দিল-আরাম শুনিল, মেহেরগেজ পাগলের সহিত যে প্রকার কথাবাত্ত কহিতেছে, তাহাতে পষ্টই প্রতীতি হয় যে, মেহেরগেজও পাগলকে প্রাণমন সমপণ করিয়াছে। ইহা জানিতে পারিয়া দিল-আরামের চিত্ত ঈষানলে জবলিয়া উঠিল। কিয়ৎক্ষণ পরে মেহেরগেজ পাগলকে বিদায় দিল । কিছুকাল অতিবাহিত হইলে একদিন দিল-আরাম রাজকুমারকে স্বভবনে লইয়া গেল । সেখানে নিজনে রাজকুমারের প্রতি প্রণয় জ্ঞাপন করিয়া অনেক অননয় বিনয় করিয়া কহিতে লাগিল—“প্রিয়তম, তুমি কে এবং তোমার গহ কোথায় বল। কি প্রয়োজনেই বা এদেশে আসিয়াছিলে ? আমি সমস্ত জানিতে পারলে যেমন করিয়া হউক তোমকে এখান হইতে বাহির করিয়া লইয়া গিয়া তোমার চরণসেবায় রত হই ।” এই কথা বলিযা দিল-আরাম আশ্রপোত করিতে লাগিল। বাদশাজাদা দেখিলেন, এই উত্তম সংযোগ উপস্থিত হইয়াছে। এ আমার প্রতি যেরপে প্রেমভাবাপন্ন, আমার কোন অনুরোধই এ ঠেলিতে পারবে না। এই বিবেচনা আমার কি প্রয়োজনে এখানে আসা যদি শনিতে এতই উৎসকে হইয়াছ তবে আমার বলিতে কোন বাধা নাই। আমি কেবল, জানিতে চাহি—গল বা সনোবর চে কন্দ ?” ইহার উত্তর যদি জানা থাকে ত বলিযা আমার বাসনা পণ কর।” ইহা শনিয়া দিল-আরাম কিয়ৎক্ষণ নীরব রহিল। শেষে বলিল—“যদি তুমি প্রতিজ্ঞা কর যে আমায় বিবাহ করিবে এবং তোমার সমস্ত বেগমগণের মধ্যে আমায় প্রধানা কবিবে, তাহা হইলে ও প্রশন সম্পবন্ধে আমি যত দরে জ্ঞাত আছি তাহা তোমায় বলিব৷” দিল-আরামের কথা হইতে রাজকুমার ববিলেন, সে এ প্রশেনর সম্পণে উত্তর জ্ঞাত নহে। সতরাং প্রতিজ্ঞা সম্প্রবন্ধে সাবধানতা অবলম্বন করিয়া বলিলেন—“হে প্রেয়সী, যদি তোমার সহায়তায় আমার মনস্কামনা পণ হয়, তাহা হইলে, তুমি যেরপ বলিতেছ ঐ রপেই কবিব।” তখন দিল-আবাম বলিল— নাথ গলে বা সনোবর চে কন্দ”, ইহার উত্তর ত আমি অবগত নহি। তবে এই মাত্র জানি যে, মেহেরঙ্গেজের সিংহাসনের নিলেন একজন হাবসী লুকাইযা থাকে, সেই মেহেবঙ্গেজকে এ প্রশ্নের কথা বলিযাছে। আমি আরও জানি যে ঐ হাবসী, বাকাফ সহর হইতে পলায়ন করিয়া আসিয়া মেহেরঙ্গেজের সিংহাসন তলে লক্কোইত হইয়াছে। সতরাং তুমি যদি বাকাফ সহরে যাইতে পার, তাহা হইলেই এ প্রশেনর গুপ্তভেদ করিতে পার, নচেৎ আর কোনও উপায় দেখি না।” এ কথা শুনিয়া বাদশাজাদা অলমাশ চিন্তা করিতে লাগিলেন--তবে আমাকে বাকাফ যাত্রা করিতে হইবে। না জানি সে নগর কত দরে এবং তথায় বাইতে কতই না বিপদে পড়িতে হইবে। কিন্তু যত দবেই হউক, যখন প্রতিজ্ঞা করিয়া বাহির হইয়াছি তখন যাইবই তাহাতে অন্যথা হইবে না। y রাজকুমারকে চিন্তা করিতে দেখিয়া দিল-আরাম —“যদি মেহেরগেজকে বধ করাই তোমার উদ্দেশ্য হয়, তবে প্রশেনর উত্তর আনিতে যাইবার ক্লেশ স্বীকার করিবার তোমার প্রয়োজন নাই। আমি সহজেই তোমার মনকামনা সিদ্ধ করিতে পারি।