পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

কিছুই নেই, তাই তাঁরা নিজের এবং পরের কাছে কিছুই জোর করে দাবি করতে পারেন না। স্বয়ং কুবের যদি তাঁদের সেধে বর দিতে আসেন তা হলে তাঁরা বোধ হয় লাটসাহেবের চাপ্‌রাশির গিল্‌টি-করা তক্‌মাটার চেয়ে বেশি আর কিছু সাহস করে চাইতেই পারেন না। তাদের বিশ্বাস নেই, তাই ভরসা নেই।

 বিনয়। গোরা, সকলের প্রকৃতি সমান নয়। তুমি নিজের বিশ্বাস নিজের ভিতরেই পেয়েছ, এবং নিজের আশ্রয় নিজের জোরেই খাড়া করে রাখতে পার, তাই অন্যের অবস্থা ঠিক বুঝতে পার না। আমি বলছি, তুমি আমাকে যা হয় একটা কাজে লাগিয়ে দাও, দিনরাত আমাকে খাটিয়ে নাও— নইলে তোমার কাছে যতক্ষণ থাকি মনে হয় যেন একটা কী পেলুম, তার পরে দূরে গেলে এমন কিছু হাতের কাছে পাই নে যেটাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারি।

 গোরা। কাজের কথা বলছ? এখন আমাদের একমাত্র কাজ এই যে, যা-কিছু স্বদেশের তারই প্রতি সংকোচহীন সংশয়হীন সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রকাশ করে দেশের অবিশ্বাসীদের মনে সেই শ্রদ্ধার সঞ্চার করে দেওয়া। দেশের সম্বন্ধে লজ্জা করে করে আমরা নিজের মনকে দাসত্বের বিষে দুর্বল করে ফেলেছি; আমাদের প্রত্যেকে নিজের দৃষ্টান্তে তার প্রতিকার করলে তার পর আমরা কাজ করবার ক্ষেত্রটি পাব। এখন যে-কোনো কাজ করতে চাই সে কেবল ইতিহাসের ইস্কুল-বইটি ধরে পরের কাজের নকল হয়ে ওঠে। সেই ঝুঁটো কাজে কি আমরা কখনো সত্যভাবে আমাদের সমস্ত প্রাণমন দিতে পারব। তাতে কেবল নিজেদের হীন করেই তুলব।

 এমন সময় হাতে একটা হুঁকা লইয়া মৃদুমন্দ অলস ভাবে মহিম আসিয়া ঘরে প্রবেশ করিলেন। আপিস হইতে ফিরিয়া জলযোগ সারিয়া, একটা পান মুখে দিয়া এবং গোটাছয়েক পান বাটায় লইয়া, রাস্তার ধারে বসিয়া মহিমের এই তামাক টানিবার সময়। আর-কিছুক্ষণ পরেই একটি একটি করিয়া পাড়ার বন্ধুরা জুটিবে, তখন সদর দরজার পাশের ঘরটাতে প্রমারা

৩৩