পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জালোচনা VGA’ বিস্তার হয়। শাসনের রাজদণ্ড কাড়িয়া লইয়া সৌন্দর্ঘ্যের মাথায় রাজছত্র ধরাই প্রকৃতির চরম উদ্দেশ্য। প্রকৃতি যদি নিষ্ঠুর শাসনপ্রিয় হইঙ্ক, তাহা হইলে সৌন্দর্ঘ্যের আবগু কই থাকিত না। তাহা হইলে প্রভাত মধুর হইত না, ফুল মধুর হইত না, ময়ূন্যের মুখশ্ৰী মধুর হইত না। এই সকল মাধুৰ্য্যের দ্বারা বেষ্টিত হইয়া আমরা ক্রমশঃ স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হইতেছি। আমরা ভালবাসিব বলিয়া জগতের হিত সাধন করিব । তখন ভয় কোথায় থাকিবে । তখন সৌন্দৰ্য্য জগতের চতুর্দিকে বিকশিত হইয়া উঠিয়াছে। অর্থাৎ আমাদের হৃদয়-কমল-শায়ী স্থপ্ত সৌন্দৰ্য্য জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছেন । তিনি জাগিয়াই আমাদের চতুর্দিকস্থ শাসনের সিপাহীগুলোর নাম কাটিয়া দিয়াছেন, জগতের চারিদিকে র্তাহার জয়জয়কার উঠিয়াছে । স্বাধীনতার পথ প্রদর্শক । কবির সেই সৌন্দর্ষ্যের কবি, র্তাহারা সেই স্বাধীনতার গান গাহিতেছেন, তাহারা সজীব মন্ত্রবলে হৃদয়ের বন্ধন মোচন করিতেছেন । র্তাহারা সেই শাসনহীন স্বাধীনতার জন্য আমাদের হৃদয়ে সিংহাসন নিৰ্ম্মাণ করিতেছেন, সেই মহারাজ কর্তৃক রক্তপাতহীন জগৎজয়ের জন্য প্রতীক্ষা করিয়া রহিয়াছেন ; কৰিরা তাহারই সৈন্য । তাহারা উপদেশ দিতে আসেন নাই। সজীবতা ও সৌন্দৰ্য্য লাভ করিবার জন্য কখন কখন তত্ত্ব র্তাহাদের দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হয়, তাহারা তত্ত্বর কাছে কথন উমেদারী করিতে যান না। কবির অমর, কেন না তাহাদের বিষয় অমর, অমরতাকে আশ্রয় করিয়াই র্তাহারা গান গাহিয়াছেন। ফুল চিরকাল ফুটিবে, সমীরণ চিরকাল বহিবে, পার্থী চিরকাল ডাকিবে, এবং এই ফুলের মধ্যে কবির স্মৃতি বিকশিত, এই সমীরণের মধ্যে কবির স্মৃতি প্রবাহিত, এই পার্থীর গানে কবির গান বাজিয়া ওঠে । কবির নাম নিজীব পাথরের মধ্যে খোদিত নহে, কবির নাম প্রভাতের নব নব বিকশিত বিচিত্রবর্ণ ফুলের অক্ষরে প্রত্যহ নূতন করিয়া লিখিত হয়। কবি প্রিয়, কারণ, তিনি যাহাদিগকে ভাল বাসিয়া কবি হইয়াছেন, তাহারা চিরকাল প্রিয়, কোন কালে তাহারা অপ্রিয় ছিল না, কোন কালে তাহারা অপ্রিয় হইবে না।