বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
সমাজ

শরীর মনের সুখ সাধন করাকে আমরা উপেক্ষা এবং উপহাসযোগ্য জ্ঞান করি। এমন কি, রমণীদের গাড়িতে চড়িয়ে স্বাস্থ্যকর বাযু সেবন করানকে আমাদের দেশের পরিহাস-রসিকেরা একটা পরম হাস্যরসের বিষয় বলে’ স্থির করেন, কিন্তু তবুও মোটের উপর বলা যায় আমাদের স্ত্রী কন্যারা সর্ব্বদাই বিভীষিকা বাজ্যে বাস করচেন না, এবং তাঁরা সুখী।

 তাদের মানসিক শিক্ষা সম্বন্ধে কথা বলতে গেলে এই পশ্ন ওঠে, আমরা পুরুষেরাই কি খুব বেশি শিক্ষিত? আমরা কি একরকম কাঁচা পাকা যোড়া-তাড়া অদ্ভুত ব্যাপার নই? আমাদের কি পর্য্যবেক্ষণশত্তি বিচারশক্তি এবং ধারণাশক্তির বেশ সুস্থ সহজ এবং উদার পরিণতি লাভ হয়েছে? আমরা কি সর্ব্বদাই পর্য্যবেক্ষণের সঙ্গে অপ্রকৃত কল্পনাকে মিশ্রিত করে’ ফেলিনে, এবং অন্ধসংস্কার কি আমাদের বক্তিরাজ্যসিংহাসনের অর্দ্ধেক অধিকার করে’ সর্ব্বদাই অটল এবং দাম্ভিকভাবে বসে থাকে না? আমাদের এই রকম দুর্ব্বল শিক্ষা এবং দুর্ব্বল চরিত্রের জন্য সর্ব্বদাই কি আমাদের বিশ্বাস এবং কার্য্যের মধ্যে একটা অদ্ভুত অসঙ্গতি দেখা যায় না? আমাদের বাঙালীদের চিন্তা এবং মত এবং অনুষ্ঠানের মধ্যে কি এক প্রকার শৃঙ্খলাসংযমহীন বিষম বিজড়িত ভাব লক্ষিত হয় না?

 আমরা সুশিক্ষিতভাবে দেখ্‌তে শিখিনি ভাব্‌তে শিখিনি কাজ কর্‌তে শিখিনি, সেই জন্যে আমাদের কিছুর মধ্যেই স্থিরত্ব নেই— আমরা যা বলি যা করি সমস্ত খেলার মত মনে হয়, সমস্ত অকাল মুকুলের মত ঝরে’ গিয়ে মাটি হয়ে যায়। সেই জন্যে আমাদের রচনা ডিবেটিংক্লাবের ‘এসে’র মত, আমাদের মতামত সূক্ষ্ম তকচাতুরী প্রকাশের জন্য, জীবনের ব্যবহারের জন্য নয়, আমাদের বুদ্ধি কুশাঙ্কুরের মত তীক্ষ্ণ কিন্তু তাতে অস্ত্রের বল নেই। আমাদেরই যদি এই দশা ত আমাদের