পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তপর্তী Sఆt ৪ । দেখলেম, গাছতলায় বসে মেয়েটি গান গাচ্ছে আর সে বাজাচ্ছে একতারা । মুখ দেখেই সন্দেহ হল লোকটা আর কিছুই না পারুক, গান বানাতে পারে। লিখে গিয়ে বললুম, তুমি কবি, চলে রাজার অভিষেকে। প্রথমটা কিছুতেই মানতে রাজি নয়। ভাবলে তাকে পাগল বললুম, না বোকা বললুম। সঙ্গের মেয়েটি বলল, ই, ইনি কবি বৈকি, নিশ্চয় কবি, অভিষেকে যেতে হবেই তো । আমনি মাকুষটা জল হয়ে গেল— আর "না’ বলবার জো রইল না । ৩ । ‘না’ বলবার মতো মেয়েটি নয় বোধ করি । ৪ । একেবারেই না । দেখলেম দিব্যি বশ মেনেছে। মেয়েটি যদি বলত, চলো, লড়াই করবে, তবে তখনই ছুটত লড়াই করতে, কবিতা লেখা তো সামান্ত কথা । ২ । শুনে বুঝছি, লোকটি কবি । মনে তো আছে, আমাদের ধরণীদাস । গৌতরাইয়ের নখনি বুনত শাল, ধরণী আন্তে আস্তে এসে দাড়াত তার আঙিনার কোণে। আর সে দিত তার কুগুল ঝুলিয়ে ঝংকার, তারই চোটে ধরণী সাত খাতা জুড়ে ছড়া লিখছে । খেতুলাল, তুই ধরেছিল ঠিক, লোকটী কবি। ৪ । হোক, বা না হোক, চেহারায় মানাবে । ওই-ষে আসছে । মন্ত্রর সঙ্গে নরেশ ও বিপাশার প্রবেশ বিপাশা । ( নরেশের প্রতি ) কবি নরোত্তম, এদের বঞ্চিত কোরো না । তোমাকে গান গাইতে বলতে সাহস পাই নে । কিন্তু আমি তো তোমারই শিষ্যা, যথাসময়ে আমাকে অনুমতি কোরো, আমি গাইব । নরেশ । তোমার ভক্তিতে আমি প্রত। ভালো, অনুমতি করছি, গাও ভূমি। বিপাশা। সে কি প্রভু, এখনই ? এখনো তো সময় হয় নি। নরেশ । এতদিনেও আমার কাছে এ শিক্ষণ হল না যে, গানের অসময় নেই ? ১। কবি অন্তায় বলেন নি। ওই দেখে-না, লোক জড়ো হয়েছে। সময় হল । বিপাশ । গান দিনের পরে দিন-ষে গেল আঁধার ঘরে, তোমার আসনখানি দেখে মন-যে কেমন করে। ওগো বঁধু, ফুলের সাজি মঞ্জরীতে ভরল আজি, ব্যখার হারে গাখব তারে রাখব চরণ পরে ।