পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাসের দেশ ՖեյԳ দহলানী । সে কথা থাক্ গে। ইস্কাবনী । বুঝেছি, বুঝেছি, দিনের বেলাকার বাধা পাখি খোলা পেয়েছিল স্বপ্নে। দহলানী। চুপ চুপ চুপ, নহলাপণ্ডিত শুনলে স্বপ্নেরওঁ প্ৰায়শ্চিত্ত লাগিয়ে দেবে। ওটা পাপ যে। কিন্তু, স্বপ্নে কী ফুতি। টেকানী। যা বলিস, ভাই, তাসের দেশে সাগরপারের হাওয়া দিয়েছে খুব জোরে। কিছু যেন ধরে রাখতে পারছি নে, সব দিচ্ছে উড়িয়ে । দহলানী। তা হোক, এখনো কিন্তু কিছু উড়ল, কিছু রইল বাকি । মাথার ঘোমটা যদি বা খসল, পায়ের বাক-মল তো সোজা করতে পারল না। ইস্কাবনী। সত্যি বলেছিল, মনটা সমূদ্রের এপারে ওপারে দোলাদুলি করছে । ঐ দেখ-ন, চিড়েতনীর মানুষ হবার অসহ শখ, পারে না, তাই মানুষের মুখোষ পরেছে— সেটা তাসমহলেরই কারখানাঘরে তৈরি। কী অদ্ভূত দেখতে হয়েছে। দহলানী। আমাদের কাকে কী রকম দেখতে হয়েছে নিজেরা বুঝতেই পারি নে। গাছের আড়াল থেকে কাল শুনলুম, সদাগরের পুত্তর বলছিল, এরা যে মানুষের সঙ সাজছে । টেক্কানী। ওম, কী লজ্জা। রাজপুত্তর কী বললেন। দহলানী । তিনি রেগে উঠে বললেন, সে তো ভালোই— সাজের ভিতর দিয়ে রুচি দেখা দিল । তিনি বললেন, এ দেখে হেসো না, হাসতে চাও তো যাও তাদের কাছে মানুষের মধ্যে যারা তাসের সঙ সেজে বেড়ায় । ইস্কাবনী। ওমা, তাও কি ঘটে নাকি । মানুষ হয়ে তাসের নকল ! আচ্ছা, কী করে তারা । দহলানী। রাজপুত্তর বলছিলেন, তারা রঙের কাঠি বুলোয় ঠোটে, কালে বাতি দিয়ে অঁাকে ভুরু, আরো কত কী, আমাদের রঙ-করা তাসেদেরই মতো। সব চেয়ে মজার কথা, ওরা খুর ওয়ালা চামড়া লাগায় পায়ের তলায় । টেক্কানী । কেন । দহলানী। পদোন্নতি ঘটে, মাটিতে পা পড়ে না। এ সমস্তই তাসের ঢঙ । একে দেওয়া, সাজিয়ে দেওয়া কায়দা । ইস্কাবনী । এ তো দেখি পবনদেবের উলটোপালটা খেল— তাসীরা হতে চায় রঙ খসিয়ে মানুষ, মানুষ চায় রঙ মেখে তাসী হতে। আমি কিন্তু, ভাই, ঠিক করেছি, মানুষের মস্তর নেব রাজপুত্তরের কাছে। টেক্কানী । আমিও ।