পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি । ¢&ჯ» মুহূর্তও ভুলিতে পারিতেছে না। যজ্ঞে আত্মবিসর্জন দেওয়ার অধিকার ছাড়া জার কোনো অধিকারই যে তাহার নাই । কিন্তু ছাগশিশুর এই বেদনা যজ্ঞকর্তার পক্ষে বোঝা কঠিন, ছাগ এতই অকিঞ্চিৎকর ৷ ইস্পীরিয়ালতন্ত্র নিরীহ তিব্বতে লড়াই করিতে যাইৰেন, আমাদের অধিকার তাহার খরচ জোগানো ; সোমালিল্যাওে বিপ্লব নিবারণ করিবেন, আমাদের অধিকার প্রাণদান করা ; উষ্ণপ্রধান উপনিবেশে ফসল উৎপাদন করিবেন, আমাদের অধিকার সস্তায় মজুর জোগান দেওয়া । বড়োয়ছোটোয় মিলিয়া যজ্ঞ করিবার এই নিয়ম । কিন্তু ইহা লইয়া উত্তেজিত হইবার কোনো প্রয়োজন নাই | সক্ষম এবং অক্ষমের হিসাব যখন এক খাতায় রাখা হয় তখন জমার অঙ্কের এবং খরচের অঙ্কের ভাগ এমনিভাবে হওয়াই স্বাভাবিক — এবং যাহা স্বাভাবিক তাহার উপর চোখ রাঙানো চলে না, চোখের জল ফেলাও বৃথা । স্বভাবকে স্বীকার করিয়াই কাজ করিতে হইবে । ভাবিয়া দেখো, আমরা যখন ইংরেজকে বলিতেছি “তুমি সাধারণ মনুষ্য-স্বভাবের চেয়ে উপরে ওঠে, তুমি স্বজাতির স্বার্থকে ভারতবর্ষের মঙ্গলের কাছে খর্ব করো", তখন ইংরেজ যদি জবাব দেয় "আচ্ছা, তোমার মুখে ধর্মোপদেশ আমরা পরে শুনিব, আপাতত তোমার প্রতি আমার বক্তব্য এই যে, সাধারণ মনুষ্য-স্বভাবের যে নিম্নতন কোঠায় আমি আছি, সেই কোঠায় তুমিও এসে, তাহার উপরে উঠিয়া কাজ নাই— স্বজাতির স্বার্থকে তুমি নিজের স্বাৰ্থ করো– স্বজাতির উন্নতির জন্য তুমি প্রাণ দিতে না পার অন্তত আরাম বল, অর্থ বল, কিছু একটা দাও । তোমাদের দেশের জন্য আমরাই সমস্ত করিব, আর তোমরা নিজে কিছুই করিবে না !” এ-কথা বলিলে তাহার কী উত্তর আছে ? বস্তুত আমরা কে কী দিতেছি, কে কী করিতেছি । আর কিছু না করিয়া যদি দেশের খবর লইতাম, তাহাও বুঝি— আলস্যপূর্বক তাহাও লই না । দেশের ইতিহাস ইংরেজ রচনা করে, আমরা তর্জমা করি ; ভাষাতত্ত্ব ইংরেজ উদ্ধার করে, আমরা মুখস্থ করিয়া লই ; ঘরের পাশে কী আছে জানিতে হইলেও হাণ্টার বই গতি নাই। তার পরে দেশের কৃষি সম্বন্ধে বল, বাণিজ্য সম্বন্ধে বল, ভূতত্ত্ব বল, নৃতত্ত্ব বল, নিজের চেষ্টার দ্বারা আমরা কিছুই সংগ্ৰহ করিতে চাই না। স্বদেশের প্রতি এমন একান্ত ঔৎস্থ ক্যহীনতাসত্বেও আমাদের দেশের প্রতি কর্তব্যপালন সম্বন্ধে বিদেশীকে আমরা উচ্চতম কর্তব্যনীতির উপদেশ দিতে কুষ্ঠিত হই না। সে-উপদেশ কোনোদিনই কোনো কাজে লাগিতে পারে না। কারণ যে-ব্যক্তি কাজ করিতেছে তাহার দায়িত্ব আছে, যে-ব্যক্তি কাজ করিতেছে না, কথা বলিতেছে, তাহার দায়িত্ব নাই— এই উভয় পক্ষের মধ্যে কখনোই যথার্থ আদানপ্রদান চলিতে পারে না। এক