পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি 蚌 ৩৬৯ কমলা । মার অসুখ ? ঘরে আর কি কেহ নাই ? তুলসী। না, তিনি তো বিবাহ করেন নাই। কমলা। বিবাহ করেন নাই, তুই কেমন করিয়া জানিলি ? তুলসী। চাকরদের মুখে তো শুনি, র্তাহার স্ত্রী নাই । কমলা। হয়তো তাহার স্ত্রী মারা গেছে । তুলসী । তা হইতে পারে। কিন্তু তাহার চাকর ব্রজ বলে, তিনি যখন রঙপুরে ডাক্তারি করিতেন, তখনো তাহার স্ত্রী ছিল না । উপর হইতে ডাক পড়িল, “তুলসী ” কমলা তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িল এবং তুলসী উপরে চলিয়া গেল । নলিনাক্ষ– রঙপুরে ডাক্তারি করিতেন— কমলার মনে আর তো কোনো সন্দেহ নাই। তুলসী নামিয়া আসিলে পুনর্বার কমলা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “দেখ তুলসী, ডাক্তারবাবুর নামে আমার একটি আত্মীয় আছেন— বল দেখি, উনি ব্রাহ্মণ তো दर्टान ?” তুলসী । ই, ব্রাহ্মণ, চাটুজ্জে । গৃহিণীর দৃষ্টিপাতের ভয়ে তুলসী বামুন-ঠাকরুনের সঙ্গে অধিকক্ষণ কথাবার্তা কহিতে সাহস করিল না, সে চলিয়া গেল । কমলা নবীনকালীর নিকট গিয়া কহিল, “কাজকর্ম সমস্ত সারিয়া আজ আমি একবার দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নান করিয়া আসিব ।” নবীনকালী। তোমার সকল অনাস্বষ্টি । কর্তার আজ অসুখ, আজ কখন কী দরকার হয়, তাহা বলা যায় না— আজ তুমি গেলে চলিবে কেন ? কমলা কহিল, “আমার একটি আপনার লোক কাশীতে আছেন খবর পাইয়াছি, তাহাকে একবার দেখিতে যাইব ।” নবীনকালী । এ-সব ভালো কথা নয়। আমার যথেষ্ট বয়স হইয়াছে, আমি এ-সব বুঝি । খবর তোমাকে কে আনিয়া দিল ? তুলসী বুঝি ; ও ছোড়াটাকে আর রাখা নয়। শোনো বলি বামুন-ঠাকরুন, আমার কাছে যতদিন আছ ঘাটে একলা স্নান করিতে যাওয়া, আত্মীয়ের সন্ধানে শহরে বাহির হওয়া, ও-সমস্ত চলিবে না তাহ বলিয়া রাখিতেছি। দারোয়ানের উপর হুকুম হইয়া গেল, তুলসীকে এই দণ্ডে দূর করিয়া দেওয়া হয়, লে যেন এ-বাড়িমুখে হইতে না পারে। i গৃহিণীর শাসনে অন্তান্ত চাকরেরা কমলার সংস্রব যথাসম্ভব পরিত্যাগ করিল।