পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 8 ఫిఫె স্মৃতিরক্ষা আজকাল আমাদের দেশে বড়োলোকের মৃত্যু হইলে, তাহার স্থতিরক্ষার চেষ্টায় সভা করা হইয়া থাকে। এই-সকল সভা ষে বারবার ব্যর্থ হইয়া যায়, তাহা আমরা দেখিয়াছি । l যে দেশে কোনো-একটা চেষ্টা ঠিক একটা বিশেষ জায়গায় আসিয়া ঠেকিয়া যায়, আর অগ্রসর হইতে চায় না, সে দেশে সেই চেষ্টাকে অন্ত কোনো একটা সহজ পথ দিয়া চালনা করাই আমি স্বযুক্তি বলিয়া মনে করি। যেখানে দরজা নাই কেবল দেয়াল আছে, সেখানে ঠেলাঠেলি করিয়া লাভ কী । 誓 আমাদের দেশে মানুষের মূর্তিপূজা প্রচলিত নাই। এই পৌত্তলিকতা আমরা যুরোপ হইতে আমদানি করিবার জন্ত উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছি। কিন্তু এখনও কৃতকার্য হইবার কোনো লক্ষণ দেখিতেছি না। ইজিপ টু মৃতদেহকে অবিনশ্বর করিবার চেষ্টা করিয়াছে। যুরোপ মৃতদেহকে কবরে রাখিয়া যেন তাহ রহিল এই বলিয়া মনকে ভুলাইয়া রাখে। যাহা থাকিবার নহে তাহার সম্বন্ধে মোহ একেবারে নিঃশেষ করিয়া ফেলা আমাদের দেশের অস্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটা লক্ষ্য । অথচ য়ুরোপে বার্ষিক শ্রাদ্ধ নাই, আমাদের দেশে তাহ আছে। দেহ নাই বলিয়া যে যাহাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করিব তিনি নাই এ কথা আমরা স্বীকার করি না। মৃত্যুর পরে আমরা দেহকে সমস্ত ব্যবহার হইতে বর্জন করিয়া অনশ্বর পুরুষকে মানিয়া থাকি। আমাদের এই প্রকারের স্বভাব ও অভ্যাস হওয়াতে মানুষের মূর্তিস্থাপনায় যথেষ্ট উৎসাহ অনুভব করি না। অথচ আমাদের দেশে মূর্তিরক্ষার পরিবর্তে কীর্তিরক্ষা বলিয়া একটা কথা প্রচলিত আছে। মানুষ মৃত্যুর পরে ইহলোকে মূর্তিরূপে নহে কীর্তিরূপে থাকে, এ কথা আমরা সকলেই বলি। “কীৰ্তিযস্ত স জীবতি” এ কথার অর্থ এই যে, র্যাহার কীর্তি আছে তাহাকে আর মূর্তিরূপে বাচিতে হয় না। কিন্তু কীর্তি মহাপুরুষের নিজের ; পূজাটা তো আমাদের হওয়া উচিত। কেবল পাইব, কিছু দিব না সে তো হইতে পারে না । তা ছাড়া মহাপুরুষকে স্মরণ করা কেবল ষে কর্তব্য, তাহা তো নয়, সেটা যে ১ তুলনীয় বারোয়ারি-মঙ্গল’, ‘ভারতবর্ষ– রবীন্দ্র-রচনাবলী চতুর্থ থও, শোকসভা— পরিশিষ্ট, রবীন্দ্র-রচনাবলী নবম পণ্ড ।