পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

838 রবীন্দ্র-রচনাবলী তা হলে কবিতা লেখা সহজ হয়, দৈহিক সহজ উত্তেজনাকে কাব্যের মুখ্য বিষয় করতে যদি না বাধে তা হলে সামান্ত খরচাতেই উপস্থিতমতো কাজ চালানো যায়, কিন্তু এইটেই সাহিত্যিক কাপুরুষতা । थ्रोन्निउँछ छोशंख ২৩ আগস্ট, ১৯২৭ সাহিত্যবিচার সাহিত্যের বিষয়টি ব্যক্তিগত ; শ্রেণীগত নয়। এখানে ‘ব্যক্তি’ শব্দটাতে তার ধাতুমূলক অর্থের উপরেই জোর দিতে চাই ; স্বকীয় বিশেষত্বের মধ্যে যা ব্যক্ত হয়ে উঠছে, তাই ব্যক্তি। সেই ব্যক্তি স্বতন্ত্র। বিশ্বজগতে তার সম্পূর্ণ অনুরূপ আর দ্বিতীয় নেই । ব্যক্তিরূপের এই ব্যক্ততা সকলের সমান নয়, কেউ-বা স্বম্পষ্ট, কেউ- বা অস্পষ্ট । অন্তত, ষে-মানুষ উপলব্ধি করে তার পক্ষে । সাহিত্যের ব্যক্তি কেবল মানুষ নয় ; বিশ্বের যে-কোনো পদার্থই সাহিত্যে সুস্পষ্ট তাই ব্যক্তি ; জীবজন্তু, গাছপালা, নদী, পর্বত, সমুদ্র, ভালো জিনিস, মন্দ জিনিস, বস্তুর জিনিস, ভাবের জিনিস, সমস্তই ব্যক্তি— নিজের ঐকাস্তিকতায় সে যদি ব্যক্ত না হল তা হলে সাহিত্যে সে লজ্জিত। যে গুণে এরা সাহিত্যে সেই পরিমাণে ব্যক্ত হয়ে ওঠে, যাতে আমাদের চিত্ত তাকে স্বীকার করতে বাধ্য হয়, সেই গুণটি দুর্লভ— সেই গুণটিই সাহিত্যরচয়িতার। তা রজোগুণও নয়, তমোগুণও নয়, তা কল্পনাশক্তির ও রচনাশক্তির গুণ । পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষকে, অসংখ্য জিনিসকে আমরা পুরোপুরি দেখতে পাই নে । প্রয়োজন হিসাবে বা সাংসারিক প্রভাব হিসাবে তারা পুলিস ইনস্পেক্টর বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্টেটের মতোই অত্যন্ত পরিদৃষ্ট এবং পরিস্পৃষ্ট হতে পারে, কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে তার হাজার হাজার পুলিস ইনস্পেক্টর এবং ডিষ্ট্রিক্ট ম্যাজিস্টেটের মতোই অকিঞ্চিংকর, এমন-কি, যাদের প্রতি তারা কর্তৃত্ব করে তাদের অনেকের চেয়ে। সুতরাং তারা অচিরকালীন বর্তমান অবস্থার বাইরে মামুষের অন্তরঙ্গরূপে প্রকাশমান নয়। কিন্তু, সাহিত্যরচয়িতা আপন স্বষ্টিশক্তির গুণে তাদেরও চিরকালীন রূপে ব্যক্ত করে দাড় করাতে পারে । তখন তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দগুবিধাতারূপে কোনো শ্রেণী বা পদের প্রতিনিধিরূপে নয়, কেবলমাত্র আপন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের মূল্যে মূল্যবান। ধনী বলে নয়, মানী বলে নয়, জ্ঞানী বলে নয়, সৎ বলে নয়, সত্ত্ব রজ বা তমোগুণান্বিত বলে নয়,