পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ©Ꮼ r, রবীন্দ্র-রচনাবলী “হোক না, হোক না, বেশ তো। চলুক না এমনই কিছুদিন, তার পরে যখন ছারখার হয়ে আসবে আপনি পড়বে ধরা। একদিন বোঝবার সময় আসবে, মায়ের চেয়ে সৎমায়ের ভালোবাসা বড়ো নয়। চুপ করে থাক না।” “কিন্তু তাও বলি খোখী, তোমার ওই হল। মালীটাকে দিয়ে কোনো কাজ পাওয়া যায় না।” হলার কাজে ঔদাসীন্যই যে আয়ার একমাত্র বিরক্তির কারণ তা নয়, ওর উপরে নীরজার স্নেহ অসংগতরাপে বেড়ে উঠছে, এই কারণটাই সবচেয়ে গুরুতর। নীরজা বললে, “মালীকে দোষ দিই নে। নতুন মনিবকে সইতে পারবে কেন। ওদের হল সাতপুরুষে মালীগিরি, আর তোমার দিদিমণির বইপড় বিষ্ঠে, হুকুম করতে এলে সে কি মানায়। হল। ছিষ্টিছাড়া আইন মানতে চায় না, আমার কাছে এসে নালিশ করে। আমি বলি কানে আনিস নে কথা, চুপ করে থাক।” “সেদিন জামাইবাৰু ওকে ছাড়িয়ে দিতে গিয়েছিল।” “কেন, কী জন্যে ।” 峰 "ও বসে বসে বিড়ি টানছে, আর ওর সামনে বাইরের গোরু এসে গাছ খাচ্ছে। জামাইবাৰু বললে, ‘গোরু তাড়াস নে কেন।” ও মুখের উপর জবাব করলে, “আমি তাড়াব গোরু ! গোরুই তো তাড়া করে আমাকে । আমার প্রাণের ভয় নেই!” শুনে হাসলে নীরজ, বললে, “ওর ওইরকম কথা। তা যাই হোক, ও আমার আপন হাতে তৈরি ।” “জামাইবাৰু তোমার খাতিরেই তো ওকে সয়ে যায়, ত৷ গোরুই ঢুকুক আর গণ্ডারই তাড়া করুক। এতটা আবদার ভালো নয়, তাও বলি।” “চুপ কর রোশনি। কী দুঃখে ও গোরু তাড়ায় নি সে কি আমি বুঝি নে। ওর আগুন জলছে বুকে । ওই যে হল মাথায় গামছা দিয়ে কোথায় চলেছে। ডাক্‌ তো ওকে ৷” আয়ার ডাকে হলধর মালী এল ঘরে । নীরজা জিজ্ঞাসা করলে, “কী রে, আজকাল নতুন ফরমাশ কিছু আছে ?” হল৷ বললে, “আছে বই-কি । শুনে হাসিও পায়, চোখে জলও আসে।” “কী রকম, শুনি ।” “ওই-ষে সামনে মল্লিকদের পুরোনো বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, ওইখান থেকে ইটপাটকেল নিয়ে এসে গাছের তলায় বিছিয়ে দিতে হবে। এই হল ওঁর হুকুম।