পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 8२७ \O6. যাহা অসম্ভব তাহাও সম্ভব হয়, যাহা অসহ তাহাও সহ হয়, নহিলে মহেঞ্জের সংসারে সে-রাত্রি সেদিন কাটিত না । বিনোদিনীকে প্রস্তুত হইয়া থাকিতে পরামর্শ দিয়া মহেন্দ্র রাত্রেই একট। পত্র লিখিয়াছিল, সেই পত্র ডাকযোগে সকালে মহেন্দ্রের বাড়িতে পৌছিল। আশা তখন শয্যাগত । বেহারা চিঠি হাতে করিয়া আসিয়া কহিল, "মাজি, চিটুঠি ।” আশার হৃৎপিণ্ডে রক্ত ধক্ করিয়া ঘা দিল। এক পলকের মধ্যে সহস্ৰ আশ্বাস ও আশঙ্কা এক সঙ্গে তাহার বক্ষে বাজিয়া উঠিল। তাড়াতাড়ি মাথা তুলিয়া চিঠিখানা লইয়া দেখিল, মহেঞ্জের হাতের অক্ষরে বিনোদিনীর নাম । তৎক্ষণাৎ তাহার মাথা বালিশের উপরে পড়িয়া গেল— কোনো কথা না বলিয়া আশা সে-চিঠি বেহারার হাতে ফিরাইয়া দিল । বেহারা জিজ্ঞাসা করিল, “চিঠি কাহাকে দিতে হইবে।” আশা কহিল, “জানি না।” রাত্রি তখন আটটা হইবে, মহেন্দ্র তাড়াতাড়ি ঝড়ের মতো বিনোদিনীর ঘরের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল, দেখিল— ঘরে আলো নাই, সমস্ত অন্ধকার। পকেট হইতে একটা দেশালাইয়ের বাক্স বাহির করিয়া দেশালাই ধরাইল— দেখিল, ঘর শূন্ত । বিনোদিনী নাই, তাহার জিনিসপত্রও নাই । দক্ষিণের বারান্দায় গিয়া দেখিল, বারান্দা নির্জন ৷ ডাকিল, “বিনোদ ।” কোনো উত্তর আসিল না ।

  • নির্বোধ। আমি নির্বোধ । তখনই সঙ্গে করিয়া লইয়া যাওয়া উচিত ছিল । নিশ্চয়ই মা বিনোদিনীকে এমন গঞ্জনা দিয়াছেন যে, সে ঘরে টিকিতে পারে নাই ।”

সেই কল্পনামাত্র মনে উদয় হইতেই, তাহ নিশ্চয় সত্য বলিয়া তাহার মনে বিশ্বাস হইল । মহেন্দ্র অধীর হইয়া তৎক্ষণাৎ মার ঘরে গেল । সে-ঘরেও আলো নাই,— কিন্তু রাজলক্ষ্মী বিছানায় শুইয়া আছেন; তাহ অন্ধকারেও লক্ষ্য হইল। মহেন্দ্র একেবারেই রুষ্ট স্বরে বলিয়া উঠিল, “মা, তোমরা বিনোদিনীকে কী বলিয়াছ । ” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “কিছুই বলি নাই ।” মহেন্দ্র । তবে সে কোথায় গেছে । ब्रांछजकैौ । बांभि कौ छांनि । মহেন্দ্র অবিশ্বাসের স্বরে কহিল, “তুমি জান না ? আচ্ছা, আমি তাহার সন্ধানে চলিলাম— সে যেখানেই থাকৃ, আমি তাহাকে বাহির করিবই।” বলিয়া মহেক্স চলিয়া গেল। রাজলক্ষ্মী তাড়াতাড়ি বিছানা হইতে উঠিয়া তাহার