পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ లిపి) গৌহাটিতে বহু দ্রষ্টব্য বস্তু আছে। উহাদের মধ্যে কটনকলেজ নামক প্রথম শ্রেণীর কলেজ, কামরূপ অনুসন্ধান সমিতির চিত্রশালা, গ্রাম্যশিল্পের সরকারী সংগ্রহ ও বিক্রয় কেন্দ্র, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের গৌহাটি-শাখা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। গৌহাটি শহর হইতে ৯ মাইল দূরে বনমধ্যে অবস্থিত বশিষ্টাশ্রম এখানকার একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান। কথিত আছে, নিমিরাজার শাপে দেহহীন বশিষ্ঠমুনি এখানকার অমৃতকুণ্ডে স্নান করিয়া পূর্ববদেহ প্রাপ্ত হন। এখানে ঘন সন্নিবিষ্ট বৃক্ষের শ্রেণী স্থানটিকে এক অপূর্ব ও গম্ভীর সৌন্দর্য্যে মণ্ডিত করিয়াছে। একটি ঝরণা এখানকার প্রাচীন মন্দিরের পাশ্ব দিয়া কুলু কুলু রবে প্রবাহিত । বশিষ্টের পত্নী অরুন্ধতীর স্মৃতি বিজড়িত অরুন্ধতীশিলা আয়ুষ্মতীগণের পরম প্রিয়। স্বামী-সৌভাগ্য লাভের আশায় তাহারা এই শিলাপটকে সিন্দুরের দ্বারা রঞ্জিত করিয়া থাকেন। গৌহাটি হইতে ঘোড়ার গাড়ী অথবা মোটর গাড়ীতে করিয়া বশিষ্ঠাশ্রমে যাওয়া যায়। শিলং–পাণ্ডু হইতে আসামের রাজধানী শিলং ৬৭ মাইল দূর। পাণ্ডুঘাট হইতে সকাল বেলায় মোটর গাড়ী ও বাস ছাড়িয়া বেলা ১১টার মধ্যে শিলংএ পৌছায়। ফিরিবার সময় শিলং হইতে সমস্ত মোটর দুইটার পরেই ছাড়ে এবং রাত্রি আটটার পূবেৰ্বই গৌহাটি হইয়া পাণ্ডু আসিয়া পৌছায়। গৌহাটি হইতে নয় মাইল সমতল ক্ষেত্ৰ দিয়া চলিবার পর জোড়াবাটের নিকট হইতে মোটর গাড়ী পাহাড়ের রাস্তা ধরে এবং আকাবাকাভাবে সপিল গতিতে পাহাড়ের গা বাহিয়া ওঠা-নামা করিতে থাকে। এই পথের দৃশ্য বড় সুন্দর। রাস্তার একদিকে খাড়া পাহাড় ও অপর পার্শ্বে গভীর খাদ ; অরণ্য সমাবৃত পবর্বত-শিখরগুলি ঢেউএর মত একটির পর একটি চলিয়া গিয়াছে। এই পথে গৌহাটি হইতে ৩০ মাইল দূরে এবং সমুদ্র হইতে ১৭৮৬ ফুট উচেচ অবস্থিত নংপো একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। এখানে উজান ও ভাটি দুই দিককার গাড়ী একত্র হয়। এখানে রাস্তার পার্শ্বে খাসিয়া রমণীগণ পান, সুপারি, কলা, চা প্রভৃতি বিক্রয় করে। এখানে কয়েকখানি দোকানও আছে। নংপোর নিকটে একটি রন্থপ্রপথ বা এক পবর্বত হইতে অন্য পবর্বতে যাইবার রাস্ত আছে। এই পথ দিয়া বন্যহস্তিগণ দলে দলে এক বন হইতে অন্য বনে যায়। নংপোর পর হইতে রাস্তার দুইদিকে শালের জঙ্গল দৃষ্ট হয়। এই রাস্তার পাশ্ব দিয়া একটি পাবর্বত্য নদী প্রবাহিত আছে। এই পথে ৫২ মাইল অতিক্রম করিবার পর দুইটি উচচ পবর্বত শৃঙ্গের মধ্যে অবস্থিত শিলং শহরের দৃশ্য চোখে পড়ে। শিলং সমুদ্র পৃষ্ঠ হইতে প্রায় ৫০০০ ফুট উচচ। শিমলা, মুসৌরি বা দাজিলিং যেমন পবর্বতের স্কন্ধে অবস্থিত, শিলং সেরূপ নহে। এই শহরটি পবর্বতের অধিত্যক বা মালভূমির উপর অবস্থিত। ভারতবর্ষে যতগুলি শৈলনিবাস আছে, তাহাদের মধ্যে মাদ্রাজের উটাকামণ্ড, রাজপুতানার আৰু এবং কাশ্মীরের সোনামাগের মত শিলংও অধিত্যকার উপর নিৰ্ম্মিত। এখানে সারা বৎসর স্বচছন্দে বাস করা যায়, এখানে বৃষ্টিপাত কিছু অধিক বলিয়া গ্রীষ্মকালেও বিশেষ গরম হয় না । মেঘ ও কুয়াস না থাকিলে শিলং হইতে ৪৫ মাইল দূরবর্তী ব্ৰহ্মপুত্র নদ স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যায়। পাইনতৰু বেষ্টত শিলং নগরীর দৃশ্য অতি মনোরম। এখানকার রাস্তাগুলিও অতি সুন্দর। শিলং শহরের বহু দ্রষ্টব্য বস্তুর মধ্যে লাট সাহেবের বাড়ী ও তাহার নিকটবর্তী অশ্বখুরাকৃতি ওয়ার্ড লেক নামক কৃত্রিম হ্রদ, কাউন্সিল ভবন, সেন্টু এডমাণ্ড কলেজ, রামকৃষ্ণ মিশন, পাস্তুর ইনস্টিটুট ও বড় বাজারের নাম উল্লেখ যোগ্য। শিলংএ বহু হোটেল ও বোডিং হাউস আছে। শিলংএর গল্ফ খেলার মাঠ ও ঘোড় দৌড়ের মাঠও খুব