বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পাষাণের কথা

পীড়িত হইলেও যেমন লাবণ্য উপলব্ধি করা যায়, ভস্মাচ্ছাদিত হইলেও যেমন অগ্নির অস্তিত্ব বুঝা যায়, সেইরূপ ভারতীয় পরিচ্ছদ ও ভাষা সত্ত্বেও স্পষ্ট বোধ হইতেছিল যে, তাহারা বিদেশীয়। তাহাদিগের নাম ও রূপাকৃতি ব্যতীত তাহাদিগের যবনত্বের আর সমুদায় নিদর্শনই লুপ্ত হইয়াছিল। তাহাদিগের পরিচ্ছদ শীতপ্রধান দেশোপযোগী, তাহারা গান্ধার ও মদ্রদেশে ব্যবহৃত পশুলোম নির্ম্মিত বস্ত্র ও গাত্রাবরণ পরিধান করিয়াছিল; তাহাদিগের বস্ত্র অতি মলিন, অত্যন্ত অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধময়। প্রথম প্রহরে যখন সূর্য্যোত্তাপ ক্রমশঃ প্রখর হইয়া উঠিতে লাগিল তখন তাহারা স্বেদপরিপ্লুত হইলে দুর্গন্ধের ভয়ে রাজা দূরে গমন করিলেন। তাহাদের নামগুলিও বিস্ময়কর যথা,—কিলিকীয় মাখেতা, অলসদ্দবাসী লিওনাত, ঔদ্যানক থৈদোর এবং কপিশাবাসী আর্ত্তিমিদর। পরে জানিয়াছি, অলসদ্দ নগরে শাকেতবিজয়ী যবনরাজ মেনন্দ্র জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ইহাদিগের মধ্যে খোদন ও তক্ষণ শিল্পের ইতিহাস সম্বন্ধে আলোচনা হইত। তাহা হইতে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য শিল্পের সামান্য জ্ঞানলাভ হইয়াছিল। সে কথা পরে যথাসময়ে বলিব।

 রাজা আসিয়া তাঁহার চিরপোষিত আশা অনুসারে সেই প্রান্তর মধ্যে প্রবাহিত ক্ষুদ্র নির্ঝরিণীতীরে স্তূপনির্ম্মাণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলেন। বৃদ্ধ ধর্ম্মযাজক তাঁহার প্রস্তাব সমর্থন করিলেন। পরিশেষে যবনগণের পরামর্শ অনুসারে নদী হইতে অল্প দূরে স্তূপ নির্ম্মাণ করাই স্থির হইল। তখন একে-একে, দুইয়ে-দুইয়ে মুণ্ডিতশীর্ষ চীরধারী ভিক্ষুগণ নগর হইতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভিক্ষুগণ স্থবির ধর্ম্মযাজকের পশ্চাদ্দেশে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দণ্ডায়মান হইলেন, নগর হইতে আনীত সদ্যঃ প্রস্ফুটিত পুষ্পরাশি প্রান্তরে স্তূপীকৃত হইল। রাজা, রাণী ও রাজপুত্র বাধপাল, ধর্ম্মরাজকের

২২