আত্মরক্ষার জন্য উত্তরাপথের রাজন্যবর্গের সাহায্যই প্রার্থনা করিতেন।[১] নবম শতাব্দীর মধ্যভাগে কুষাণ-বংশীয় শেষ সাহি-রাজ কতোরমানের ব্রাহ্মণ-মন্ত্রী “লল্লিয়” বা “কালার”, প্রভুকে পদচ্যুত করিয়া, সাহি-সিংহাসন অধিকার করিয়াছিলেন।[২] কাবুল কুষাণ-বংশীয় সাহি রাজগণের রাজধানী ছিল। লল্লিয়-সাহি সিন্ধুনদের পশ্চিমতীরবর্ত্তী উদ্ভাণ্ডপুরে (উন্দ) স্বীয় রাজধানী স্থাপিত করিয়াছিলেন। ২৫৬ হিজরি [৮৬৮-৯ খৃষ্টাব্দে] সিস্থানের অধিপতি ইয়াকুব লয়স্ আফগানিস্থানের অন্তর্গত গজনী-প্রদেশ অধিকার করিয়াছিলেন, এবং কাবুল পর্য্যন্ত অগ্রসর হইয়াছিলেন।[৩] ইহার কিয়ৎকাল পরে, তুর্কিস্থানের সামানী-বংশীয় অধিপতি ইস্মাইল কর্ত্তৃক গজনী সামানী-রাজ্যভুক্ত হইয়াছিল। খৃষ্টীয় দশম শতাব্দের তৃতীয়পাদে, সামানী-রাজের একজন প্রভাবশালী সেনা-নায়ক, আলব-তিগীন, প্রভুর ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হইয়া, গজনীতে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। আলব-তিগীনের সবুক্-তিগীন নামক একজন তুরূষ্ক ক্রীতদাস ছিল। প্রভুর মৃত্যুর কয়েক বৎসর পরে, ৯৭৭ খৃষ্টাব্দে, সবুক্-তিগীন গজনীর গদিতে আরোহণ করিয়াছিলেন। ইহার দশ বৎসর পরে, [৯৮৭ খৃষ্টাব্দে] সবুক্-তিগীন উত্তরাপথের সিংহদ্বার [সাহি-রাজ্য] অধিকারে বদ্ধপরিকর হইয়া, উহা আক্রমণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। সাহি-জয়পাল তখন উদ্ভাণ্ডপুরের সিংহাসনে আসীন ছিলেন। সবুক্-তিগীন আরব্ধ সাহিরাজ্য-ধ্বংসসাধনত্রত অসম্পূর্ণ রাখিয়া, ৯৯৯ খৃষ্টাব্দে কালগ্রাসে পতিত হইলে, তদীয় উত্তরাধিকারী মামুদ, প্রবলতর পরাক্রম সহকারে, সাহি-রাজ্য আক্রমণ করিতে লাগিলেন। কাশ্মীর, কান্যকুব্জ, কালঞ্জর (জেজ্যভুক্তি) এবং উত্তরাপথের অন্যান্য রাজ্যের রাজন্যবর্গ প্রাণপণে বিপন্ন সাহি-রাজের সহায়তা করিয়াছিলেন। মামুদের গতিরোধ করিতে গিয়া, সাহি জয়পাল, তদীয় পুত্র সাহি আনন্দপাল, পৌত্র সাহি ত্রিলোচনপাল, একে একে প্রাণপাত করিয়াছিলেন। সাহি-রাজ্য সম্পূর্ণরূপে অধিকার করিয়াও, কিন্তু মামুদের উচ্চাভিলাষের তৃপ্তি হইয়াছিল না। তিনি তখন উত্তরাপথের পবিত্র তীর্থক্ষেত্রের এবং সমৃদ্ধ নগরনিচয়ের লুণ্ঠনে এবং ধ্বংস-সাধনে ব্রতী হইয়াছিলেন। থানেশ্বর, মথুরা, কান্যকুব্জ, গোয়ালিয়র, কালঞ্জর, সোমনাথ ক্রমে মামুদের ধনলোভ এবং পৌত্তলিকতা-বিদ্বেষ-বহ্নিতে আহুতি রূপে প্রদত্ত হইয়াছিল। এই ঘোর দুর্দ্দিনে, উত্তরাপথের পূর্বার্দ্ধের অধিপতি গৌড়াধিপ মহীপাল কি করিতেছিলেন?
মামুদের আক্রমণ সম্বন্ধে গৌড়াধিপ মহীপালের ঔদাসীন্যের আলোচনা করিলে মনে হয়, কলিঙ্গজয়ের পর, মৌর্য্য-অশোকের ন্যায়, [কাম্বোজান্বয়জ গৌড়পতির কবল হইতে] বরেন্দ্র উদ্ধার করিয়া, মহীপালেরও বৈরাগ্য উপস্থিত হইয়াছিল; এবং অশোকের ন্যায় মহীপালও যুদ্ধ বিগ্রহ পরিত্যাগ করিয়া, পরহিতকর এবং পারত্রিক কল্যাণকর কর্ম্মানুষ্ঠানে জীবন উৎসর্গ করিতে কৃতসঙ্কল্প হইয়াছিলেন। রাঢ়দেশে (মুর্শিদাবাদ জেলায়) “সাগরদীঘি”, এবং বরেন্দ্রে (দীনাজপুর
৪১