পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় দিনের পালা RS» ডেলিগেট হয় নাই, সভাপতির প্রস্তাবে ভোট দিয়া কংগ্রেসে ভোটের জোরে নিজেদের সভাপতি নির্বাচন করানই ছিল গরমদলের উদ্দেশ্য । তজন্য পূর্ব হইতে গাড়ী গাড়ী ডেলিগেট সুরাটে চালান হইয়াছিল, সাতদিন হইতে দেশে দেশে বক্তৃতা করিয়া “সাজ সাজা” রবে ঘুমন্ত সুরাটকেও জাগাইয়া তোলা হইয়াছিল। আমরাও সব সাজিয়া গুজিয়া গিয়াছি, সবারই হাতে মোটা বেতের ছড়ি । কি জানি যদি ঘা কতক খাইতে হয়, তখন ঋণ রাখিয়া আসাটা তো আর ভাল দেখাইবে না। সেদিন পাণ্ডালে ঢুকিয়াই দেখা গিয়াছিল। নীল উর্দি পরা, ভাড়া করা খালাসী গুণ্ডা, মণ্ডপখানি ভিতরদিক দিয়া বেড়িয়া আছে। আজও পূর্ববৎ রাসবিহারীর নাম সভাপতিরূপে উত্থাপন করা হইল। আমনি তিলক উঠিয়া প্ৰতিবাদ করিলেন । তঁাহার কথা কে শোনে ? জনে জনে উঠিয়া দ্বিতীয় তৃতীয় দফা এই প্ৰস্তাবের পোষকতা করিতে লাগিলেন। বার বার আদেশ সত্ত্বেও তিলক বসিলেন না, বলিলেন-“আপনার আমার এই amendment না শোনা অবধি আমি এমনি দাড়াইয়া থাকিব।” মদ-পুরুষ হাত গুটিাইয়া আচল পৰ্ব্বতবৎ খাড়া রহিলেন, আর মণ্ডপ মুখরিত হুক্কারবের মধ্যে সভাপতি নির্বাচিত পরিগৃহীত হইয়া আসন গ্ৰহণ করিলেন । গণ্ডগোল থামাইবার জন্য তাহার পর যে অভিনয় আরম্ভ হইল, তাহার মত প্ৰহসন কোন রঙ্গমঞ্চে কখন দেখি নাই। বৃদ্ধ সভাপতির মুহুমুহু ঘণ্টাধ্বনি, মাঝে মাঝে লিখিত বক্তৃতা পাঠের ব্যর্থপ্রয়াস আবার ঘণ্টাধ্বনি ও জোড়হাতে মুক কাকুতি মিনতি । পািনর মিনিট ধরিয়া এই লজ্জাকর ব্যাপার। চলিল, পনির মিনিট ধরিয়া শিয়াল, কুকুর, র্যাড়, বিড়াল, ময়ুর, মুরগীর ডাক চারিদিক হইতে উঠিয়া এই প্ৰহসনের সম্বৰ্দ্ধনা করিল। আজ তিলক বলিতে উঠিলেও নরম দলের পাশী সভ্যরা এইরূপ কোলাহল করিয়াছে, এখন একে একে সভাপতি, সুরেন্দ্ৰনাথ প্ৰভৃতি সবার বেলায়ই গরমদলের আট শ” ডেলিগেট ও দর্শকদল তাহার চতুগুণ কলরব করিয়া ছাড়িল ।